১৭ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

EN

অভিবাদন, দুরন্ত কৈশোর

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৫:১২ পূর্বাহ্ণ , ৫ আগস্ট ২০১৮, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে

আমরা অনেকেই এখনো আমাদের কিশোরদের স্লোগান, দাবি অনুবাদ করতে পারিনি। বুঝে উঠতে পারিনি কিশোররা কি বলতে  চাইছে। যদি ভাবি  দিয়া ও করিমের পরিবারকে টাকা দেয়া, রমিজ উদ্দিন কলেজকে বাস দেয়াতেই কৈশোরদের তুষ্ট করা যাবে, বিষয়টি সেখানে আর নেই। দিয়া এবং করিমকে বাস পিষে হত্যা করলো, এবারের প্রতিবাদ সেই ঘটনাকে টপকে অনেক দূর চলে এসেছে। শাজাহান খানের ক্ষমা চাওয়া এবং অনুদানে দিয়া ও রাজিবকে হত্যার না হয় একটা দফারফা হলোই। পরিবার, কলেজ, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা তাতে সন্তুষ্টও না হয় হলো, কিন্তু তাতেই কি কৈশোরদের দাবি বা স্লোগানের সমাধানে পৌঁছা যাবে? মোটেও তা নয়। স্কুল শিক্ষার্থীরা ২০১৮-তে এসে এবার আঙুল উঁচিয়ে আমাদের দেখিয়ে দিচ্ছে ৪৭ বছরেও বাংলাদেশ কোনও প্রতিষ্ঠান গড়তে পারেনি। কতোটা ভঙ্গুর আমাদের নৈতিকতা। শিক্ষার্থীদের চ্যালেঞ্জের মুখে ঢাকার পুলিশ কমিশনারকে তার সহকর্মীদের নির্দেশ দিতে হচ্ছে নিজের এবং গাড়ির কাগজপত্র নিয়ে পথে নামতে। খবর পাচ্ছি সরকারি-বেসরকারি অন্যান্য দফতরেরও টনক নড়েছে। তারাও নড়তে-চড়তে  শুরু করেছে তাদের চালক ও গাড়ির কাগজপত্র হালনাগাদের জন্য। কিশোররা বিচার চায়, এবং সবার জন্য অভিন্ন বিচার। এই দাবিটি আমরা ৪৭ বছরে পূরণ করতে পারিনি। আমাদের উপলব্ধিতে আসা প্রয়োজন-কৈশোরের এই আন্দোলন আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে নয়। বলা যায় বিএনপির বিরুদ্ধেও নয়। তারা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে স্বাধীনতার পর  থেকে রাষ্ট্র নির্মাণের দায়িত্বে যারা ছিলেন তাদের বিরুদ্ধে। শুধুই যে রাজনৈতিক দল ও রাজনীতিকরা এই নির্মাণে ছিল তা তো নয়। ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন পেশায় বিভক্ত হয়েও তো আমাদের পূর্বসূরি এবং আমরা নির্মাণের দায়িত্বে ছিলাম। কিন্তু সেখানে আমরা দেখছি রাজধানীসহ সারাদেশে জনবান্ধব গণপরিবহন ব্যবস্থা তৈরি করা যায়নি। যখন যে রাজনৈকতিক দল ক্ষমতায় এসেছে তখন তাদের নেতারা বাস-ট্রাক টার্মিনাল এবং  গণপরিবহনকে অবৈধ আয়ের উৎস হিসেবে ব্যবহার করেছে। সরকার বদলের সঙ্গে  সঙ্গে হাত বদল হয়েছে কর্তৃত্বের। গণপরিবহনের শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি রূপ নিয়েছে দুর্নীতি কেন্দ্রের উদাহরণে। টাকার বিনিময়ে রুট পারমিট ও ড্রাইভিং লাইসেন্স বিক্রির প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি এখন বিআরটিএ। প্রচলিত আইনের সীমাবদ্ধতা থাকলেও যতটুকু আছে সেটুকুই প্রয়োগ করতে ব্যর্থ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা সড়কের ট্রাফিক ব্যবস্থায় আধুনিকতা আনতে পারেনি। এখনো দড়ি-বাঁশ পদ্ধতিতে আছে। মূলত সড়ক থেকে বাড়তি আয়ের জন্যই এই সনাতন পদ্ধতি জিইয়ে রাখা। যে চালকদের বিরুদ্ধে বেপরোয়া গতিতে গণপরিবহন চালানোর অভিযোগ, তাতে চালকদের দায় কতটুকু তাও বিবেচনায় আনা প্রয়োজন। চালকদের জন্য কোনও বেতন কাঠামো নেই। মালিকরা একটি নির্দিষ্ট ভাড়ায় বাস-ট্রাক তাদের হাতে তুলে দিচ্ছে। সেই ভাড়া ও চাঁদার টাকা তুলতে গিয়েই নিষিদ্ধ প্রতিযোগিতায় নামছে গণপরিবহন। পথের ঘাতক হয়ে উঠেছে বাস-ট্রাক।

আজ পথে গতিরোধ করে শিশুরা যে লাইসেন্স চাচ্ছে, অপ্রাপ্তবয়স্ক চালককে গাড়ি থেকে নামিয়ে দিচ্ছে, এই লাইসেন্স ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালক তো পথে সেই কবে থেকেই আছে। তাহলে পুলিশ ও বিআরটিএ তাদের খুঁজে পেলো না কেন? মন্ত্রী, পুলিশ, গণমাধ্যমের গাড়ির কাগজ হালনাগাদ থাকে না কেন? এই প্রশ্নগুলো কিশোররা তুলেছে। এখানে আরেকটি বিষয় আমলে নেয়া প্রয়োজন। সড়ক-মহাসড়কে মানুষ হত্যার ঘটনা নতুন নয়। এবারও হয়তো রমিজ উদ্দীন কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের সহপাঠী নিহত হওয়ার ঘটনায় পথে নামতো, মানববন্ধন বা সড়ক অবরোধ করতো এবং একপর্যায়ে ফিরে যেতো শ্রেণিকক্ষে। কিন্তু তারা তো ফিরেইনি বরং তাদের সঙ্গে সারা দেশের শিক্ষার্থীরা পথে নেমে এসেছে। তারা সমর্থন পেয়েছে অভিভাবক, শিক্ষকসহ সাধারণ জনগণের। কারণ কি? কারণ হচ্ছে দিয়া-রাজিবকে জাবাল-ই নূর পিষে ফেলার পর নৌপরিবহন মন্ত্রীর বিকৃত ও জনগণের আবেগের প্রতি তাচ্ছিল্য-অবজ্ঞার হাসি। এই হাসি জনগণ মেনে নিতে পারেনি। প্রতিবাদে শিশুরা পথে নেমে এসে প্রমাণ করে দেখাচ্ছে আমাদের রাষ্ট্র নির্মাণে কতো ‘খাদ’ রয়ে গেছে। পুলিশ এতদিনেও সড়কে লেন ধরে বাহন চলতে বাধ্য করতে পারেনি। জরুরি লেন তৈরি করতে পারেনি, ওরা পেরেছে। এখন আমরা পথে নামতে পারছি না লজ্জায়। কারণ, ৪৭ বছরে নিজেদের ‘ফিটনেস’ নিশ্চিত করতে পারিনি আমরা।

প্রশ্ন বা বিতর্ক উঠেছে এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা আর কতদিন পথে থাকবে? ভয় তৈরি হয়েছে, সকল রাজনৈতিক শক্তি নিজ নিজ মতো শিক্ষার্থীদের ব্যবহার করতে চাইছে। আন্দোলনকে কলঙ্কিত ও বিতর্কিত করার রকমারি কৌশল চলছে প্রথম দিন থেকেই। সকল রাজনৈতিক মতাদর্শের সচেতন নাগরিকেরা নানাভাবে এই আন্দোলনে সমর্থন জানাচ্ছেন। একই সঙ্গে সকলে চাইছেন শিক্ষার্থীরা রাজপথ ছেড়ে আসুক। সরকারের কাছ থেকে পাওয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত না হলে পথে নামার সুযোগ তো থাকছেই। না হলে এই ‘একজোট হওয়া’ গণজাগরণও কোটা আন্দোলনের পরিণতি পেতে পারে। তখন আন্দোলনকারীরা যেমন, তেমনি যারা চান রাষ্ট্রের পুনর্নির্মাণ শুরু হোক, তারাও হতাশ ও বিষণ্নতায় নিমজ্জিত হবেন। অতএব, যে প্রশ্ন বর্তমান কৈশোর তুলেছে রাষ্ট্রের দিকে, তাদের পূর্বসূরিদের দিকে, সেই প্রশ্ন বহাল ও অব্যাহত রাখাটাই জরুরি এবং আন্দোলনের মূল শক্তি। দুরন্ত কৈশোরের হাতে পুনর্নির্মিত হোক বাংলাদেশ। সূূূূএ: বাংলা ট্রিবিউন

লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

August 2018
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন