গৌরব-সংগ্রাম-সাফল্যের ৬৯ বছর: শুভ জন্মদিন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১২:২২ অপরাহ্ণ , ২৩ জুন ২০১৮, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
জহির রায়হান: সুদীর্ঘ রাজনীতি এবং আন্দোলন-সংগ্রামের গৌরব-উজ্জ্বল ঐতিহ্যের ধারক রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ।মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দলটির ৬৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ ২৩ শে জুন ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অগ্রগতি, সংগ্রাম, ইতিহাস আর ঐতিহ্যের ৬৯তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী ।তৎকালীন সময়ে পাকিস্তানী উপনেবেশিক শাসক চক্রের দুঃশাসন আর নির্যাতনে বাঙ্গালী জাতি তাদের অস্তিত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করে। এই সকল নির্যাতিত বাঙ্গালীদের নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলীম লীগ গঠন করা হয়। ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ। প্রতিষ্ঠার পর পালাক্রমে আতাউর রহমান খান, ইয়ার মোহাম্মদ খান, আলী আমজাদ খান, আনোয়ারা খাতুনসহ নেতৃস্থানীয় নেতাদের বাসায় দল পরিচালনার নীতি-কর্মসূচি গ্রহণ করা হত।
১৯৫০ সালে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে ‘নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ গঠিত হওয়ার পর পশ্চিম পাকিস্তানের করাচির অফিসকে গন্য করা হত কেন্দ্রীয় অফিস। অন্যদিকে প্রাদেশিক শাখা হিসেবে গন্য করা হত পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। ১৯৫৫ সালে অসম্প্রদায়িক চেতনায় দলের নাম আওয়ামী মুসলিম লীগ থেকে আওয়ামী লীগ করা হয়। ১৯৫৬ সালে হোসেন শীহদ সোহরাওয়ার্দীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ পরিচালিত হয়। ৫৪ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। এ বছরেই সাধারণ নির্বাচনে ক্ষমতাশীন মুসলিম লীগকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্ট বিজয়ী হয়।
১৯৬৪ সালে ২৫ জানুয়ারী পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, বাঙ্গালী জাতির মুক্তির মহান নেতা শেখ মুজিবুর রহমান এনডিএফ থেকে বেরিয়ে দলকে পূর্নর্জীবিত করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন। পাকিস্তান সরকারের শোষন বঞ্চনার বিরুদ্ধে বাঙ্গালীর মুক্তির আন্দোলনে শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ পর্যায়ক্রমে ধারাবাহিক নেতৃত্ব দিতে থাকে। ১৯৬২ শিক্ষা কমিশন আন্দোলন, ১৯৬৬ বাঙালীর মুক্তির সনদ ৬ দফা ঘোষনা, ১৯৬৯ এর গণ অভ্যুন্থান, ১৯৭০ সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয়, সর্বশেষ ১৯৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ বাঙ্গালীর চুড়ান্ত বিজয় ছিনিয়ে আনে। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রের জন্ম হয়। এককথায় বাঙালীর মুক্তির ও স্বাধীনতার ইতিহাস আওয়ামী লীগের ইতিহাস এক ও অভিন্ন।
আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা অর্জিত হয়। বিশ্বের বুকে বীরের জাতি হিসেবে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
এই সুদীর্ঘ পথ পরিক্রমায় আওয়ামী লীগকে অনেক চড়াই-উৎরাই এবং ভাঙা-গড়ার মধ্য দিয়ে আগাতে হয়েছে আওয়ামী লীগকে। কখনো নেতৃত্বের শুন্যতা, আবার কখনো ভাঙনের মুখে পড়তে হয়েছে এ দলটিকে। কিন্তু সাধারণ মানুষের বিপুল সমর্থনে মহীরুহ হয়ে ওঠা আওয়ামী লীগকে কোনো বিভেদ ভাঙনই টলাতে পারেনি।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা, ৩ নভেম্বর জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর নেতৃত্ব শুন্যতায় পড়ে আওয়ামী লীগ। এর পর দলের মধ্যে একাধিক ভাঙনও দেখা দেয়।
১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার মধ্যদিয়ে আওয়ামী লীগকে সমূলে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর মতাসীনরা মনে-প্রাণে আওয়ামী লীগের ধ্বংস কামনা করেছেন। ।এর মধ্যে ক্ষমতাসীনদের কলকাঠিতে আওয়ামী লীগকে বহুধাবিভক্ত করা হয়।
আওয়ামী লীগের অত্যন্ত দুঃসময়ে, ১৯৮১ সালে, সংকটাপন্ন অবস্থা থেকে দলটিকে রক্ষার জন্য জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনাকে তাঁর অনুপস্থিতিতেই তাঁকে দলের সভানেত্রী নির্বাচন করা হয়। । ১৯৮১ সাল থেকে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা প্রায় ধ্বংসস্তূপ থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ধীরে ধীরে পুনরুজ্জীবিত করে তোলেন।
সুদীর্ঘ এই পথপরিক্রমায় নিবেদিতপ্রাণ কর্মীরাই আওয়ামীলীগকে এগিয়ে এনেছে।বার বার কালো থাবায় অনেকেই ছিটকে গেছে আবার অনেক সুবিধাভোগীরা থেকেছে ক্ষমতার ছায়াতলে। তারপরও সববিপদে এগিয়ে এসেছে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা আওয়ামী লীগের তূণমূল কর্মীরা। হয়ত তারা আজ অবহেলিত বড় বড় সুবিধা ভোগীদের কারণে; দলের সংকটপূর্ণ সময়ে হয়ত তাদের পাওয়া যাবে না। তারপরও নিবেদিতপ্রাণ যারা কোনদিন আওয়ামীলীগের ক্ষমতার কোন সুবিধা পায়নি বা পাবেও না চির অবহেলিত কিন্তু তারাই সংকটে,দুর্যোগে,সংগ্রামে এগিয়ে এসেছে। এইটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগেকে করেছে অনন্য,ব্যতিক্রমী।
আপনার মন্তব্য লিখুন