ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সাম্প্রতিক ঘটনায় ছিটকিনি
আল আমীন শাহীন প্রকাশিত: ১০:৫৮ অপরাহ্ণ , ২৮ মে ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
বাসার একটি দরজার ছিটকিনি নড়বড়ে হয়ে গেছে। ছিটকিনিটা ইচ্ছামতো কাজ করে। ইচ্ছা হলে লাগলো, ইচ্ছা হলে খুললো। হঠাৎ তার উপর জোর খাটাতে গিয়ে হাতে ব্যথা পেলাম। হাতটা ফুলে গেছে। টনটনে ব্যথা নিয়ে শুয়ে শুয়ে ভাবছি ছিটকিনিটা যথাসময়ে সাড়ানো দরকার ছিল। ব্যথার মধ্যে আমার মাথায় ছিটকিনি শব্দটি প্রতিধ্বনী হচ্ছে। কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে কিছুদিন যাবৎ যে কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা এরমধ্যে এই ছিটকিনির সম্পৃক্ততা রয়েছে। বলে রাখা ভালো, এখন কিছু ভাবলেই লেখা যায় না। তবুও নিজের ভাবনাটাকে স্মারক রাখতে নিজেরই স্ট্যাটাসে লিখছি। “ধুমপান সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” লেখা লাগিয়ে সিগারেট খাওয়ার দৃশ্য সিনেমায় দেখানো যেমন দোষের নয়,“ধুমপান সাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর” লেখাটা দেখে সিগারেট খাওয়া যেমন দোষের নয়, ছিটকিনি প্রসঙ্গে তেমনই আমার এই লেখা, সম্পূর্ণ আমার ব্যক্তিগত ভাবনা। যা হোক গত সপ্তাহের আলোচিত ঘটনার মধ্যে রয়েছে মধ্যপাড়ার শান্তিবাগের রাসেল এর মৃত্যু ঘটনা। বিভিন্ন সূত্র থেকে যা শুনেছি এই রাসেল সদর থানায় একটি রুমে অন্যদের ছিটকিনি লাগিয়ে পালাতে চেয়েছিল, অবশেষে ছাদ থেকে পড়ে তার মর্মান্তিক মৃত’্য হয়েছে, রাসেল এর আহত হওয়ার পর থেকে কবর দেয়া পর্যন্ত ঘটনাগুলোতে উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছি জেনেছিও অনেক কিছু। প্রথম দিনে রাসেল এর মা যখন প্রেস ক্লাবের চত্বরে বিলাপ করছিল তখন মায়ের আহাজারি বুকে বিঁধেছে। কবর দেয়ার সময় এলাকাবাসীর আর্তনাদ আহাজারী আছে মনের মধ্যে, দরিদ্র পরিবারের রাসেল এর অকাল মর্মান্তিক মৃত্যুতে খুব কষ্ট পেয়েছি।
অপর ঘটনা সাংবাদিক সহকর্মী এইচ এম সিরাজের ছুরিকাঘাতের ঘটনা। হাসপাতালে সিরাজকে আহত অবস্থায় নিয়ে গিয়ে দেখি জরুরী বিভাগের কর্তব্যরতদের দরজায় ছিটকিনি আটা। একজন চিকিৎসকের কর্তব্যকালীন সময়ে নিজের রুম ছেড়ে অন্য একটি রুমে ছিটকিনি লাগিয়ে দরজা বন্ধ করেছিল। ছিটকিনি লাগানোর শব্দটাও মনে আছে। অপর ঘটনা, সদর হাসপাতালের জরুরী ভিাগে ছাত্রলীগের দুগ্রুপের উত্তেজনার। এখানেও আলোচিত হয়েছে ছিটকিনি প্রসঙ্গ, ছাত্রলীগের দুগ্রুপের একটি ঘটনায় একজন আহত হলে প্রতিপক্ষের অপর জনও আসে হাসপাতালে, উত্তেজিত এক গ্রুপ তাকে পেয়ে বেধড়ক মারধোর করে , এসময় এক যুবক হামলা থেকে রক্ষা পেতে জরুরী বিভাগের ডাক্তার রুমে দরজা বন্ধ করে ছিটকিনি লাগাতে চেয়েছিল কিন্তু ঐ দরজার ছিটকিনি না থাকায় দরজা বন্ধ করতে পারেনি, এতে সে মার একটু বেশী খেয়েছে।
কিছুদিন আগে ডাক্তার বন্ধু দেলোয়ার হোসেন মাহি আমার একটি লেখার উত্তর দিয়ে কিছু কথা বলেছে, এর মধ্যে হাসপাতালের উপকরণ যথাযথ সাপ্লাই না দেয়ার বিষয়টি সে উল্লেখ করে, সে বলতে চেয়েছে, হাসপাতালে উপকরণ সামগ্রী সাপ্লাই দেয়ার দায়িত্ব ডাক্তারের নয়, এ সংক্রান্ত দোষ ডাক্তারদের চাপালে হবে না। আমি বন্ধু মাহির কথায় একমত। কিন্তু আমজনতা মাহির সাথে কি একমত হতে পারবে ? আমজনতা হাসপাতাল কতৃপক্ষ বলতে ডাক্তারদের বুঝে,আর ডাক্তার ছাড়াতো হাসপাতালের শীর্ষ দায়িত্ব সমুহে আর কেউ নেই। ছিটকিনি আছে কি নেই এই বিষয়টি ডাক্তারদেরই জানার কথা, এ ছাড়া হাসপাতালে মাঝে মধ্যে যা ঘটে তাতে ডাক্তরদের নিরাপত্তা আর বিশ্রাম এর জন্য হাসপাতালের দরজা সমুহে ছিটকিনি ভালভাবে থাকা প্রয়োজন। বন্ধু মাহির উত্তরের অন্যএকটি প্রসঙ্গে বলছি, ডাক্তাররা সমাজের শ্রেষ্ঠ সেবক, তাদের প্রয়োজনীয়তা অপরীসীম, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা ধন্যবাদ আমি কেন সমাজবাসীর, চিকিৎসার প্রয়োজনীয়তা আছে বলেই ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে স্কুলের চেয়ে বেসরকারী হাসপাতাল ক্লিনিকের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশী। ্সবে ডাক্তার থাকুক আর না থাকুক এসবের সংখ্যা বাড়ানোর প্রবণতায় কোন ছিটকিনি নেই। ধন্যবাদ মাহি স্পষ্টভাষী বলে তোমার সুনাম আছে , এতে সত্যভাষী সংযোজন হোক শুভাকাঙ্খী হিসেবে এই কামনা করি।
সাম্প্রতিক ছিটকিনির অপর ঘটনা হলো শহরের শেরপুরে লায়ন ফিরোজুর রহমান স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নিয়াজ মোঃ কাজলের বাড়িতে চুরির ঘটনা। এই বাড়িতে ছিটকিনিটা শক্ত ছিল বলে চোর আধুনিক কায়দায় ছিটকিনির চারপাশ কেটে, ছিটকিনি অক্ষত রেখে ঘরে ঢুকে এবং মূল্যবান জিনিষপত্র নিয়ে যায়,পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ছিটকিনির অংশ বিশেষ দেখেছে, কিন্তু ঘটনায় জড়িতদের এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার করতে পারেনি। বাড়ির মালিককে ভাল দরজা ,উন্নত ছিটকিনির পরামর্র্শ দিতে ভুলেনি পুলিশ। পাশাপশি বলাও হয়েছে নিজ বাড়ির নিরাপত্তা ,রক্ষণাবেক্ষণ অর্থাৎ ভালকরে ছিটকিনি লাগাতে হবে। শানিতবাগের রাসেল– এর মৃত্যুর ঘটনা প্রসঙ্গে সহকর্মী এক সাংবাদিক বলছিল, কি ভাবে রাসেল এর মৃত্যু হয়েছে তার রহসস্যের মধ্যে ছিটকিনি এখনও আটা, বিষয়টির নিয়ে উৎসাহ অতি উৎসাহ নিয়েও কথাও উঠেছে, অতি উৎসাহের বিষয়টি লেখালেখিও হয়েছে গণমাধ্যমে। তবে প্রকৃত রহস্য জানতে পারেনি কেউই । সহকর্মী সাংবাদিক বলছিল , ছিটকিনি এটে রুদ্ধদ্বার সভা করে বিষয়টির সমঝোতা হয়েছে। যাক ভালো, রাসেল এর পরিবারের সন্তুষ্টিই বড় কথা। এই ব্যাপারে নিজের অভিমতের দরজায় ছিটকিনি লাগিয়ে রাখলাম। তবে পক্ষপাতের উর্ধ্বে উঠে নোম্যান্স ল্যান্ডে দাঁড়িয়ে আসলে কি ঘটেছিল তা জানার আগ্রহ আমারও যেমন তেমনই আমজনতার। , আমার ঘরের নড়বড়ে ছিটকিনির জন্য হাতের ব্যথাটা টনটন করছে, ছিটকিনি নিয়ে সম্প্রতি ঘটনাগুলোর টনটনে ব্যথাও রয়েছে মনে। তবে নিরাপত্তার জন্যই ঘরের সিটকিনির সমস্যাটা দূর করবো দ্রুত ভাবছি। অতি উৎসাহ, বেশী প্রশ্ন, বেশী বলাবলি লেখালেখি সময়ের জন্য বিপদ, তাই এ ক্ষেত্রেও মনের ঘরে সত্য বলার জায়গাটাও ছিটকিনি দিয়ে রেখেছি তা বুঝতে পারি।
আপনার মন্তব্য লিখুন