২রা জুন, ২০২৩ ইং | ১৯শে জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

লেবাননে বিলুপ্ত শ্রমিক লীগের ‘মে দিবস’ অনুষ্ঠানে দু’গ্রুপের সংঘর্ষ : আহত ৫

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১:৪০ পূর্বাহ্ণ , ৩ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

লেবানন থেকে জহির রায়হান: লেবাননে আওয়ামীলীগের অঙ্গসহযোগী বিলুপ্ত সংগঠন শ্রমিক লীগের মহান মে দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে নাম না দেওয়াকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি আমির হোসেনসহ অন্তত ৫ জন আহত হয়েছে। তাদের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সহ প্রচার সম্পাদক হামিদ আলী গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন।

গত মঙ্গলবার (১লা মে) সন্ধ্যা ৭টায় লেবাননের বৈরুতস্থ লাইলাকি হোটেল আল কামাল অডিটোরিয়ামের বাহিরে প্রধান ফটকে এই সংঘর্ষ হয়। আহতদের স্থানীয় বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এ সময় ঘটনাস্থলে বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা যাত্রীবাহী বাস ভাংচুর করেছে উত্তেজিত নেতাকর্মীরা।

 

আহতরা হলেন, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি আমির হোসেন, একই সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ শিপন ও সদস্যা রাশিদা আমির ওরফে (শিমা)। তারা সবাই বিলুপ্ত শ্রমিক লীগ আয়োজিত মে দিবস অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন।

জানা যায়, গত ২৪ এপ্রিল লেবানন আওয়ামীলীগের এক জরুরী বর্ধিত সভায় মহান মে দিবস উদযাপনকারী শ্রমিক লীগকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে গত ২৯ এপ্রিল ৭১ সদস্য বিশিষ্ট শ্রমিক লীগের আরেকটি নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছিলেন লেবানন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ। পূর্বের ঘোষণাকৃত বিলুপ্ত কমিটির সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান রবিনের নাম ব্যানারে না দিয়েই অনুষ্ঠান শেষ হয়। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে বিরোধ দেখা দেয়। সংঘর্ষে লেবানন আওয়ামীলীগের ঘোষণাকৃত নতুন শ্রমিক লীগের কিছু নেতাকর্মীও অংশগ্রহণ করেন।

সংঘর্ষে আহত একজন নেতাকর্মী।

তবে অনুষ্ঠান চলাকালে কোনপ্রকার ঝামেলা না হলেও অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করে নেতাকর্মীরা অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার সময় বাহিরে দু’পক্ষের লোকজনদের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি পরে সংঘর্ষ হয়। এ সময় মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি আমির হোসেনসহ তার সংগঠনের অন্তত ৫জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

স্থানীয় আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি আমির হোসেন তার সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা মুক্তিযোদ্ধা দোলা মিয়া এবং কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীদের ছবি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবির সাথে এডিট করে তাদের নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছেড়ে দেয় যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ নিয়ে লেবানন আওয়ামীলীগের বিভিন্ন নেতাকর্মীরা তাদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে আমির হোসেনকে নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা ও এর তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন। একইসাথে কেউ কেউ আবার মুক্তিযোদ্ধা দোলা মিয়ার মুক্তিযুদ্ধ সনদ জাল বা ভুয়া বলেও আখ্যায়িত করছেন। নেতাকর্মীদের ধারণা, এসব বিষয় নিয়েই উত্তেজিত নেতাকর্মীরা চড়াও হয়ে আমির হোসেনের উপর হামলা চালিয়েছে।

ইট হাতে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মী।

তবে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি আমির হোসেন এ হামলার জন্য লেবানন আওয়ামীলীগকেই দায়ী করেন। তিনি মুঠোফোনে বলেন, এটা লেবানন আওয়ামীলীগের একটা চক্রান্ত। আর যে বাসটি ভাংচুর করা হয়েছিল তার ক্ষতিপূরণ বাবদ ৭ শত মার্কিন ডলার বাস কর্তৃপক্ষকে জরিমানা দিয়েছেন তিনি।

হামলাকারীদের বিরুদ্ধে বাস কর্তৃপক্ষ কোন মামলা মোকদ্দমা করবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা তাদের ব্যাপার। তবে তারা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি এ হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

এদিকে বিলুপ্ত শ্রমিক লীগের সভাপতি রানা ভুঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, আমার শ্রমিক লীগের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করে লেবানন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মীকে সভাপতি পদে রেখে নতুন কমিটির অনুমোদন দিয়েছে। যা সত্যিই দুঃখজনক এবং আওয়ামীলীগের জন্য এটা একটা লজ্জাকর বিষয়। এতে অন্যান্য দলের কাছে আওয়ামীলীগকে ছোট করা হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাশাপাশি লেবানন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের এমন এহেন সিদ্ধান্তের জন্য তিনি তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করেন।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ লেবানন কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান টিটু’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, এ হামলার সাথে লেবানন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কোন সম্পৃক্ততা নেই। কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগের কোন নেতাকর্মী যদি এই হামলার সাথে জড়িত থাকে এবং তার প্রমাণ মিলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তিনি আরো বলেন, যে শ্রমিক লীগের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে সেটিকে আমরা বিলুপ্ত ঘোষণা দিয়েছি। তাদের আয়োজিত অনুষ্ঠানের মঞ্চে অসাধু দালাল পক্ষের উপস্থিতিও আমাদের চোখে পড়েছে। এজন্যই তাদের কমিটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছিল।

উল্লেখ্য, উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের নাম থাকলেও তিনি অনুষ্ঠানে যোগদান করেননি। রাষ্ট্রদূত এর অবর্তমানে লেবানন আওয়ামীলীগ একাংশের আহ্বায়ক গাউস শিকদার প্রধান অতিথির আসন গ্রহণ করেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামীলীগ একাংশের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইস্কান্দার আলী মোল্লা।

বিশেষ অতিথি হিসেবে আরো উপস্থিত ছিলেন, লেবানন আওয়ামীলীগ একাংশের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম সিরাজ, বাবুল শেখ, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ও পুনর্বাসন সোসাইটি লেবানন যুব কমান্ডের সভাপতি আমির হোসেন, ইবরাহিম খাঁন, ইকবাল মিয়া প্রমুখ।

 

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

May 2018
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন