৩০শে মার্চ, ২০২৩ ইং | ১৬ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

EN

এক প্রবাসীবান্ধব সৎ রাষ্ট্রদূতের গল্প, সততা যার শক্তি!

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১০:৫৯ অপরাহ্ণ , ১১ এপ্রিল ২০১৮, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

জহির রায়হান, লেবানন থেকে: আমার কর্মের প্রতি আমি খুবই শ্রদ্ধাশীল। কর্মের মধ্যে ডুবে থাকলেই সময়টা বেশ ভালো কেটে যায়। এরচেয়ে আরো অধিক ভালো লাগে তখনই, একজন মানুষকে যখন পরিপূর্ণ সেবা দিয়ে তার মুখে হাসি ফোঁটাতে পারি। জনসেবা করতে আমি ভীষণ ভালবাসি। পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি জনসেবা করার সুযোগ থাকায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত। জনসেবা করার ইচ্ছা অনেকেরই থাকে। কিন্তু পেশাগত দায়িত্ব পালনের কারণে অনেকের কাছেই সেটা সম্ভব হয় না? এক্ষেত্রে নিজেকে আমি সৌভাগ্যবান বলে মনে করি। একান্ত সাক্ষাৎকারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাইমস ডটকম এর এই প্রতিবেদকের সাথে এমনটিই বলছিলেন লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। লেবাননের রাজধানী বৈরুতে রাষ্ট্রদূতের দপ্তরে প্রায় ঘন্টা ব্যাপি এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রদূত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন এই প্রতিবেদকের সাথে।

কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি উপজেলার গয়েশপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম নেন আদর্শবান এই রাষ্ট্রদূত। পরিবারে বাবা সিরাজ মিয়া সরকার এবং মা মনোয়ারা বেগম দম্পত্তির চার ছেলে পাঁচ মেয়ের মধ্যে তিনিই সবার বড়। পারিবারিকভাবেও একটি চমৎকার ঐতিহ্যের অধিকারী তিনি। পরিবারের সবাই উচ্চ শিক্ষিত এবং সরকারি/বেসরকারি চাকরিতে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁর বাবাও ছিলেন একজন ব্যাংক কর্মকর্তা।

১৩তম বিসিএস এর মাধ্যমে তিনি পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদান করেন। পররাষ্ট্র ক্যাডারে যোগদানের পূর্বে একাদশ বিসিএস এর মাধ্যমে তিনি প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন। এসময় তিনি নরসিংদী জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সেক্টরে অত্যন্ত সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য যে, একাদশ এবং ত্রয়োদশ দুই বারই মেধা তালিকায় তিনি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছেন। ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট লেবাননে রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদানের পূর্বে তিনি আমেরিকা, মরক্কো, ফ্রান্স ও চীনে গুরুত্বপূর্ণ বিশেষ পদে সততার সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। লেবাননে তিনি প্রথম রাষ্ট্রদূত হিসেবে যোগদান করেন।

লেবাননে রাষ্ট্রদূত হিসেবে দূতাবাসে যোগদানের এক বছরের মধ্যে শ্রমিকদের নুন্যতম বেতন ২৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩৫০ করেন। এছাড়া দূতাবাসের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে এবং প্রবাসীদের সেবা দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তাঁর এই উদ্যোগের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, এদেশি লেবানিজদের কাছে বাংলাদেশ সমন্ধে সঠিক ধারণা দেওয়া, বাংলাদেশের সাথে ব্যবসা বিনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করা, কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক পর্যায়ে লেবাননের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন জোরদার করা, এ দেশের শ্রমবাজারকে ধরে রাখা, প্রবাসী বাংলাদেশীদের রেমিটেন্সগুলো বৈধভাবে বাংকের মাধ্যমে প্রেরণ করা এবং প্রবাসীদেরকে দূতাবাসের সাথে সরাসরিভাবে সম্পৃক্ত করতে লেবাননের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মতবিনিময় সভা করার পাশাপাশি তাদেরকে সঠিক সেবা প্রদান করা ইত্যাদি। পর্যায়ক্রমে লেবাননের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৪৫তম বার্ষিকী উদযাপন করার লক্ষেও তিনি বিভিন্ন উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন।

বলা যায় এই উদ্যোগে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন। কেননা, লেবাননে ইউনিফিলে নিযুক্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানসহ লেবানিজ প্রশাসনের কাছে তাদেরকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করেছেন। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১৭ সালে ৩ জন এবং ২০১৮ সালে আরো ৩ জন লেবানিজ প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে উচ্চতর ট্রেনিং করার জন্য বাংলাদেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। শুধু তাই নয়, এ দেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথেও রয়েছে তাঁর সুসম্পর্ক। সেই সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দেশের উন্নয়নে এবং প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে তিনি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন।

 

জনবান্ধব রাষ্ট্রদূতের হাতে ক্রেস্ট তুলে দিচ্ছেন আ’লীগের নব নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান টিটু।

এরই ধারাবাহিকতায়, লেবাননে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির কাছ থেকে “শ্রেষ্ঠ জনবান্ধব রাষ্ট্রদূত” উপাধি পেয়েছেন। এছাড়াও লেবাননের সংশ্লিষ্ট প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন দপ্তর থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করার জন্য তিনি অসংখ্য ক্রেস্ট উপহারের পাশাপাশি নানান প্রশংসায় ভূষিত হয়েছেন।

জানা যায়, ২০১৫ সালের ১২ আগস্ট লেবাননে যোগদানের পর কাজ করার পরিবেশটুকু খুব বেশি সহায়ক ছিল না, কিন্তু দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কে সুদক্ষ নেতৃত্বের মাধ্যমে পরিচালিত করে ইতোমধ্যেই তিনি তাঁর কর্মদক্ষতার প্রমাণ করেছেন। পাশাপাশি দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে টিম ওয়ার্কে পরিণত করেছেন। দূতাবাসের কাজকে জনবান্ধব করতে এবং প্রবাসীদের আরো কাছাকাছি পৌঁছাতে তিনি ব্যবহার করেছেন সোশ্যাল মিডিয়াকে আর প্রবাসীদের সেবাদানে চালু করেছেন হেল্প ডেস্ক। ইতিবাচক চিন্তা করেন বলেই তাঁর দ্বারা এসব করা সম্ভব হয়েছে।

আমরা অনেকেই ইতিবাচক পরিবর্তনের কথা চিন্তা করতে পারি না। কিছুটা হেরে যাওয়া বা সমালোচিত হওয়ার ভয়ে। আর এই হেরে যাওয়া বা ভয়কে যাঁরা জয় করতে পেরেছে, তাঁরাই তো ইতিহাসের খাতায় নিজেকে স্মরণীয় করে রাখার সুবর্ণ সুযোগটি পেয়েছে। যাঁরা নিজের বলয়ের মধ্যে থেকেও এই সমাজের জন্য ঝুঁকি নিয়ে কল্যাণকর কাজ করেন তাঁরাই এই সমাজের আলোকিত মানুষ! তেমনি এক কর্মদীপ্ত অনন্য মানুষ, লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। যিনি নিজে সকল প্রতিকূল সমস্যার ভীরেও যেমন স্বপ্ন দেখেন,তেমনি অন্যকেও স্বপ্ন দেখাতে জানেন! যাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে ও কর্মকান্ডে অনেকাংশে কমে গেছে লেবাননে অবস্থানরত ১ লক্ষ ৬০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশীদের দুর্ভোগ, দুর্দশা, হতাশা এবং দালালদের দৌরাত্ম্য।

দালালদের বিরুদ্ধে নিরব বিপ্লব নয়, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সত্যের মশাল জেলে ‘সরব বিপ্লব’ ঘটিয়ে লেবাননে ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন সফল রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। লেবাননে নিরীহ বাংলাদেশি শ্রমিকদেরকে রক্তচোষা ‘দালাল’ চক্রের শোষণ থেকে মুক্ত করার পাশাপাশি দূতাবাসতে ঘিরে গড়ে ওঠা সংঘবদ্ধ দালাল-সিন্ডিকেট ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দিয়ে একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে সরাসরি অবদান রাখলেন তিনি কমিউনিটি ডেভেলপমেন্টে। এজন্য দালাল সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রক দালাল চক্রের চক্ষুশূল হয়েছিলেন তিনি। তাঁর সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে কোনদিনই আপোষ করেননি অন্যায়ের সাথে এবং ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে ছিলেন অবিচল।

লেবাননে মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের মতো আত্মপ্রত্যয়ী মানুষরা আছে বলেই, আজো আমরা স্বপ্ন দেখি। কুয়াশার মাঝে দূরের ঐ আলোর মিষ্টি প্রভাটুকু খুঁজে বেড়াই। আর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের মতো হাজারো মানুষ চায় এই সমাজে শুভবোধের ছোয়ায় সমাজটাকে বদলে দিতে। কিন্তু আমাদেরই চারপাশে থাকা নেতিবাচক ও স্বার্থানেষী মানুষগুলোর জন্য অনেকের উদ্যোগগুলো আলোর মুখ দেখে না।

প্রিয় এই মানুষটির পথচলা শুভ হোক। সেইসাথে জনবান্ধব রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারকে আরো সময়সীমা বাড়িয়ে দিয়ে লেবাননে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদেরকে সহযোগিতা করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ সরকারের কাছে জোর দাবী জানিয়েছেন লেবানন প্রবাসীরা।

বৈরুত, লেবানন।
আপডেট : সন্ধ্যা ৭:৫৭:০০ মিনিট। ১১ এপ্রিল ২০১৮ইং।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

April 2018
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
30  
আরও পড়ুন