একজন আলোকিত মানুষ! অতঃপর কর্মব্যস্ততা!
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ , ২৯ মার্চ ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
একজন মানুষ প্রকৃত জনসেবার মধ্য দিয়েই আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারে। অর্জন করতে পারে মানুষের অকৃত্রিম ভালবাসা ও শ্রদ্ধা। আসলে, শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা এসব জোর করে আদায় করা যায় না, তার কর্মের মধ্যেই তা নিহিত। এই পৃথিবীতে সেসব মনীষীরাই চির স্মরণীয় হয়ে আছেন, তাঁরা সবসময়ই সকল লোভ, লালসা, অর্থ মোহের ঊর্ধ্বে থেকে মানব সেবা করে গেছেন। তেমনি একজন সৎ, নির্ভীক, নিষ্ঠাবান, ন্যায়পরায়ণ, পরোপকারী মানুষ লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশের জনবান্ধব রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার।
বিগত দিনে “আমার চোখে তিঁনিই একজন আলোকিত মানুষ” শিরনামে একটি কলাম লিখেছিলাম। সেই কলামে তাঁর কিছু গুণানুরাগের কাথা উল্লেখ করেছিলাম। আজ বিস্তারিত লিখার প্রয়াস নিয়ে আবারও কলম উঁচিয়ে ধরলাম। আসলে, গুণীজনদের নিয়ে লিখতে বসলে যতটা কমফোর্টেবল মনে হয়, ঠিক ততটাই আনইজি ফিল করি। কেননা, ভাল মানুষদের নিয়ে লিখতে ভাল লাগে বলেই নিজেকে কমফোর্টেবল মনে করি। আর আনইজি ফিল করার কারণ হল, যদি পরিপূর্ণভাবে তাঁর গুণাবলীর কথা তুলে ধরতে না পারি!
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, লেবানন এশিয়ার মধ্যপ্রাচ্যের একটি ছোট্ট দেশ। এদেশের ভৌগলিক আয়তন মাত্র ১০ হাজার ২ শত ৩০ কিলোমিটার আর জনসংখ্যার পরিমাণ ৬২ লাখ ৩৭ হাজার ৭ শত ৩৮। এই ছোট্ট একটি দেশে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর লোকসংখ্যাও নেহাত কম নয়। সব দেশের মানুষই কমবেশি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। এক্ষেত্রে আমাদের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সমস্যাদির যেন অন্ত নেই। এর মধ্যে আকামা সমস্যা, লিগ্যালাইজড সমস্যা, দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে সমস্যা, দুর্নীতি সমস্যা, বিভিন্ন অপকর্ম সমস্যা ইত্যাদি। চারিদিকে শুধু সমস্যাই সমস্যা। সব সমস্যা সমাধানের দায়ভার শুধু একজন মানুষেরই ঘাড়ে। সে মানুষটা হল, মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার।
কর্মব্যস্ত মানুষ তিঁনি। প্রবাসী বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করতেই তাঁর যত ব্যস্ততা। শত ব্যস্ততা নিয়ে বিরামহীনভাবে তাঁর ছুটে চলা। বোধ হয় কর্মের মধ্যেই তাঁর সবটুকু সুখ নিহিত। প্রায়শই তিঁনি বলে থাকেন, আমার সাধ আছে সাধ্য নেই। আসলে, লেবাননে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্য অনেক কিছুই তিঁনি করতে চান। কিন্তু দূতাবাসে জনবল সংকটের কারণে তিঁনি পিছিয়ে পরেন। তবুও থেমে নেই তাঁর কোন কাজ।
এইতো ক’দিন আগে বিভিন্ন কারণে অবৈধ হয়ে যাওয়া কাগজপত্রহীন প্রায় ৪ হাজার ২ শতাধিক অসহায় বাংলাদেশীদেরকে বিনা জরিমানায় দেশে প্রত্যাবাসন করেছেন তিঁনি। এটি ছিল তাঁর একটি যুগান্তকারী মাইলফলক পদক্ষেপ। কেননা, ৫০ টির অধিক দেশের দূতাবাস এদেশে থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র বাংলাদেশ দূতাবাস-ই বিনা জরিমানায় কাগজপত্রহীন অবৈধ প্রবাসীদের দেশে পাঠাতে সক্ষম হয়েছেন। আর এই অর্জন সম্ভব হয়েছে শুধুমাত্র রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের অক্লান্ত পরিশ্রমের জন্যই।
শুধু তাই নয়, আকামা সমস্যার স্থায়ী সমাধান এবং অবৈধভাবে বসবাসরত সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের লিগ্যালাইজড করতে তিঁনি আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। দালালদের দৌরাত্ম্য কমাতে এবং সাধারণ প্রবাসীদের জানমান রক্ষার্থে ও ভোগান্তি কমাতে রাষ্ট্রদূত বিরাট ভূমিকা পালন করছেন। একইসাথে দালালদের প্রতিহত করতে তিঁনি জিরো টলারেন্স নীতিমালা গ্রহণ করেছেন। এই সবকিছুই শুধুমাত্র প্রবাসীদের জন্য।
এছাড়াও লেবাননে অবস্থানরত প্রবাসী বাংলাদেশীদের সুরক্ষা দেওয়ার লক্ষে তিঁনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সেমিনারে অত্যন্ত বিনয়ের সহিত বাংলাদেশীদের সঠিক পথে চলার অনুরোধ করেন। কিন্তু কিছু বাংলাদেশি তাঁর অনুরোধ উপেক্ষা করেই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে যায়। এতে একদিকে যেমন দেশের সুনাম ক্ষুন্ন হয় অপরদিকে তাদের পরিবারেরও ভোগান্তির শেষ নেই। কিছুদিন পূর্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে লেবাননের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে ইতিমধ্যেই ১৫/২০ হাজার পিছ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। এর সাথে সম্পৃক্ত নয়জন ইয়াবা ব্যবসায়ীকেও আটক করেছেন। এতে করে একদিকে যেমন প্রবাসীরা ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্যদিকে এর সাথে জড়িত ব্যক্তিরা অনেকটা সোচ্চারও হয়েছেন। কিন্তু আমার প্রশ্ন হল, আজ যদি মান্যবর রাষ্ট্রদূত মহোদয়ের কথাগুলো আমলে নিয়ে তারা সঠিক পথে পরিচালিত হতো, তবে এদেশীদের কাছে আমাদের সম্মান আরো বেড়ে যেতো।
দেশের অর্থনীতির চাকা সচল করতে, দেশকে আরো এগিয়ে নিতে এবং এ দেশের শ্রমবাজার ধরে রাখতে রাষ্ট্রদূত মহোদয় যেখানে শ্রম, ঘাম, সময় সব ব্যয় করে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে একদল স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের স্বর্থের জন্য এদেশি লেবানিজদের কাছে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছে।
দীর্ঘ সময় ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম আর অধ্যবসায়ের পর, আগামী এপ্রিল মাসে ১৫-২০ সদস্যের একটি লেবানিস বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ী দল বাংলাদেশে প্রেরণ করতে যাচ্ছেন রাষ্ট্রদূত। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এই সফরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগ এবং বানিজ্যের যে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে সেটি উন্মোচিত হবে। বিনিয়োগকারী ব্যবসায়ীদের এই সফর সফল হলে আগামীতে আরো বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের দিকে ঝুঁকবেন বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। তাঁর কঠিন অধ্যবসায়ের ফলশ্রুতিতেই এদেশি বিনিয়োগকারীর প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে যেতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এটা আমাদের জন্য সত্যিই একটা গর্বের বিষয়।
যিঁনি সর্বদাই তাঁর ভালবাসা, শ্রম, ঘাম, মেধা ও বুদ্ধিমত্তা দিয়ে দেশ এবং দেশের মানুষের জন্য এতকিছু করছেন। নিঃসন্দেহে তিঁনি একজন আলোকিত মানুষ।
চলবে….
ছবি: ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত ।
লেখক: জহির রায়হান।
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী।
নির্বাহী সম্পাদক
ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাইমস ডটকম।
www.brahmanbariatimes.com
ই-মেইল: jahirpress2014@gmail.com
বর্তমান অবস্থান: বৈরুত, লেবানন।
আপনার মন্তব্য লিখুন