লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাসে বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণের স্বীকৃতি উদ্যাপন
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৪:২৮ অপরাহ্ণ , ১২ মার্চ ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
লেবানন থেকে জহির রায়হান : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে ইউনেসকো কর্তৃক ইন্টারন্যাশনাল মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করায় লেবাননের রাজধানী বৈরুতের বাংলাদেশ দূতাবাস হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক আলোচনা সভা ও আনন্দ সমাবেশ। লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস গত রবিবার (১১মার্চ) এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় শিশু কিশোরদের রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রথম অধিবেশন শেষ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় সময় দুপুর ২টায় দ্বিতীয় অধিবেশনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানের শুরুতেই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ এবং মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গান -এর ভিডিওচিত্র প্রদর্শন করা হয়। তারপর পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে আলোচনা সভা শুরু হয়। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত পাঠ করেন দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন।
পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের পর লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের মান্যবর রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন এবং বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে ইউনেসকো কর্তৃক বিশ্ব প্রামাণ্য ঐতিহ্য হিসেবে গৌরবজনক স্বীকৃতি প্রদান করায় সকল বাংলাদেশিকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান। বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি রাষ্ট্রদূতের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ লেবানন শাখা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন, পরে লেবানন আওয়ামীলীগের শাখা কমিটির নেতৃবৃন্দরা বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
তারপর দূতালয় প্রধান ও দূতাবাসের প্রথম সচিব (কাউন্সিলর) সায়েম আহমেদ রাষ্ট্রপতির বাণী পাঠ করেন এবং দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন প্রধানমন্ত্রীর বাণী পাঠ করে শুনান।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে বাংলাদেশের ইতিহাসের একটি যুগান্ত সৃষ্টিকারী মাইলফলক হিসেবে উল্লেখ করে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাঙালির ন্যায্য অধিকার অর্জনের লক্ষ্যে গৃহীত সকল গণতান্ত্রিক প্রচেষ্টা যখন শেষ হয়ে যায়, তখনই বঙ্গবন্ধু তাঁর এই ভাষণের মাধ্যমে জাতিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, বঙ্গবন্ধুর অলিখিত এই ভাষণে শব্দচয়ন, এর স্বতঃস্ফূর্ততা, সাবলীলতা, দৃঢ় প্রকাশভঙ্গি শুধুমাত্র স্বাধীনতাকামী মানুষের জন্য বিশেষ অনুপ্রেরণার উৎসই ছিল না, এটি ছিল বাঙালীর মুক্তিসংগ্রাম ও দেশপ্রেমের এক আলোকবর্তিকা।
রাষ্ট্রদূত বলেন, ৭ মার্চের ভাষণ এখন বিশ্ব সম্পদ। আজকে ৪৭ বছর পরেও বঙ্গবন্ধুর বক্তৃতার স্বাদ যেন শেষ হয়নি। এটা একটা কালজয়ী বক্তব্য। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলা নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা তাঁর কন্যা পূরণ করছেন। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ভাষণের অন্তর্নিহিত চিরকালীন আবেদন অন্তরে লালন করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় যথাযথ অবদান রাখার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানান।
লেবাননে বসবাসরত প্রবাসী বাঙালীদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রদূত বলেন, জাতিসংঘ একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে যে আগামী ২০২৪ সালের দিকে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিবে। এটা আমাদের বাংলাদেশীদের জন্য অত্যন্ত গর্বের বিষয়। এছাড়া ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াবে। অতএব প্রবাসে আপনারা দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করবেন এটাই প্রত্যাশা।
তিনি আরো বলেন, লেবাননে আপনারা যারা প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে কর্মরত আছেন। কর্মক্ষেত্রে যে কোন দুর্ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষুনিকভাবে জরুরি ভিত্তিতে দূতাবাসকে অভিহিত করবেন। এতে করে আপনাদের চিকিৎসা যেমন দ্রুত হবে ঠিক তেমনিভাবে হাসপাতালের বিলও দূতাবাস আপনাদের কমিয়ে দিতে পারবে। তারপরও আপনারা সবাই সতর্কতা অবলম্বন করে কাজ করবেন। পাশাপাশি ২৬ মার্চ বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় দূতাবাসে এসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে জাতীয় সঙ্গীত গাইতে সকল বাংলাদেশীদের আহ্বান করেন তিনি।
লেবাননে দালালদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, রাঘব বোয়ালদের চেয়ে চুনোপুঁটি দালালরাই বেশি ক্ষতি করছে। এসব চুনোপুঁটি দালালদের জিরু টলারেন্সের মাধ্যমে সতর্কবার্তা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া জুয়া, ইয়াবা, সি-টু সমিতিসহ সুধ ব্যবসায়ীদের উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, আপনারা এসব পরিহার করে প্রবাসে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে কাজ করুন। অন্যথায় আপনাদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এসময় তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আপনাদের সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই বরং দেশের সুনাম রক্ষার্থে এবং আপনাদের মঙ্গলের জন্যই আমার এই উদ্যোগ। এজন্য প্রবাসী কমিউনিটিসহ সকল বাংলাদেশীদের সহযোগীতা কামনা করেন তিনি। এছাড়া আকামা সমস্যা সমাধানের লক্ষেও তিনি কাজ করছেন বলে প্রবাসীদের আশ্বস্ত করেন।
আগামী ২০/২৬ মার্চ পর্যন্ত দূতাবাসে কনস্যুলার সপ্তাহ উদযাপন হবে। কাজের ফাঁকে ফাঁকে যেটুকু সময় পাওয়া যায় দূতাবাসে এসে অংশগ্রহণ করতে সকল বাংলাদেশীদের আমন্ত্রণ জানান তিনি। সেইসাথে প্রবাসীদেরকে বিনোদনের বিনোদনের জন্য প্রত্যেক মাসে একদিন করে দূতাবাসে বাংলাদেশি মুভি দেখানোর উদ্যোগ নিয়েছেন রাষ্ট্রদূত। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর ছোটবেলা থেকে শেষ সময় পর্যন্ত যে কোন ছবি সংগ্রহ করে সময়, তারিখ ও স্থানসহ উল্লেখ দূতাবাসে জমা দেওয়ার জন্য উপস্থিত সকল বাংলাদেশীদের উদাত্ত আহ্বান করেন। এসময় তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ সকল প্রবাসীদের সাথে মতবিনিময় করারও সিদ্ধান্ত জানান।
গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্য করে রাষ্ট্রদূত বলেন, সংবাদ সংগ্রহ করতে গণমাধ্যম কর্মীদের অবশ্যই রিস্ক আছে। এক্ষেত্রে আপনার যে কোন বিষয়ে ফলাও করতে কয়েকজনের বক্তব্য নিবেন এবং যারা করছে তাদের নাম উল্লেখ করবেন। এতে আপনাদের নিউজের যেমন সফলতা আসবে ঠিক তেমনিভাবে অপরাধীদের ও শাস্তির আওতায় আনা সহজ হবে। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের জন্য গণমাধ্যম কর্মীদের আন্তরিক ধন্যবাদ জানান তিনি।
উক্ত আলোচনা সভায় সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন, কমিউনিটির সদস্য মোঃ আলমগীর, মশিউর রহমান টিটু, মহসিন মৃধা, রুবেল আহমেদ ও আতাউর রহমান।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লেবানন আ’লীগের আজীবন সদস্য আবুল বাসার প্রধান, লেবানন আ’লীগ সভাপতি বাবুল মুন্সী, মহিলা সম্পাদিকা সুফিয়া আক্তার বেবি, কমিউনিটির সদস্যবর্গ, সেচ্ছাসেবী ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা, কর্মচারীবৃন্দ ও প্রবাসী বাংলাদেশীরা।
আপনার মন্তব্য লিখুন