৫ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

লেবাননে বাবা ট্যাবলেটের রমরমা বাণিজ্য!

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ২:৪৩ অপরাহ্ণ , ৭ মার্চ ২০১৮, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে

লেবানন থেকে জহির রায়হান : সর্বনাশা ‘বাবা ট্যাবলেট’ ওরফে ইয়াবা দেশের বারটা বাজিয়ে এখন বিদেশেও (লেবাননে) চলছে এর রমরমা বাণিজ্য। এর প্রধান কারণ ইয়াবার সহজলভ্যতা। আর এই রমরমা বাণিজ্যের নেপথ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই বাংলাদেশি প্রবাসীরা।

লাল রঙের ‘মরণ নেশা’ সুগন্ধী ক্যান্ডি তথা ইয়াবার ব্যাপক বানিজ্য বিস্তার লাভ করায় লেবাননেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তির নতুন করে বারোটা বাজতে এখন খুব একটা বাকি নেই। যেভাবে হু হু করে বাড়ছে আসক্ত কিশোর ও তরুণের সংখ্যা। এতে করে এদেশে জনশক্তি রপ্তানিতেও এর বিরাট প্রভাব পড়বে তা নিঃসন্দেহে। অনেক আগে থেকেই যেখানে বাংলাদেশিদের ব্যাপক দুর্নাম, অনৈতিক সম্পর্ক, অপরাধমূলক অপকর্মের পাশাপাশি এখন নতুন করে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য যুক্ত হওয়ায় রীতিমত উদ্বিগ্ন লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস কর্তৃপক্ষসহ প্রবাসী কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ।

তথ্যমতে , সাময়িক ‘যৌন উত্তেজক’ বড়ি ইয়াবার অনুপ্রবেশ অবশ্য নতুন নয় ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যে। এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হেরোইনের চেয়েও ভয়াবহ এমন তথ্য অনেক আগেই জানিয়েছিল যুক্তরাজ্যের ‘ড্রাগ ইনফরমেশন’। ইয়াবা অর্থ পাগলের ওষুধ। এটি মূলত মেথামফিটামিন, সঙ্গে ক্যাফেইনও ব্যবহৃত হয়। এটি অত্যন্ত সক্রিয় একটি মাদক এবং এর নেশা থেকে বেরিয়ে আসা খুব কঠিন। দীর্ঘমেয়াদে ইয়াবা ব্যবহারের প্রতিক্রিয়া হিসেবে হাইপোথার্মিয়া, অনিদ্রা, অমনোযোগিতা, কাঁপুনি, খিঁচুনি, দুশ্চিন্তা, আগ্রাসী মনোভাবসহ নানা উপসর্গ দেখা দিতে পারে। লিভার, কিডনিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। একপর্যায়ে এরা হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পারে। তখন নিজের মা-বাবাকে হত্যাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করতে পারে না। তাই ইয়াবার ক্ষতিকারকতা বহুমুখী।

সরেজমিন অনুসন্ধানে ও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, শাক-সবজী, আচার-শুটকির প্যাকেটের আবরণে ‘বাবা ট্যাবলেট’ ওরফে ইয়াবার চালান আসে লেবাননে। এরপর বাংলাদেশী ক্ষুদ্র ইয়াবা ব্যবসায়ীরা লেবাননের বিভিন্ন স্থানে স্থানান্তরিত করে ইয়াবা আসক্ত কিশোর ও তরুণের মাঝে তা অবাধে বিক্রি করছে।

জানা যায়, বৈরুতের শারাফিয়া, সাবরা বাজার, নাভা, আধুনিস এসব এলাকায় চলছে ‘বাবা ট্যাবলেট’ ওরফে ইয়াবার রমরমা বাণিজ্য। প্রতি পিছ চম্পা সুপার (ছোট) ইয়াবার মূল্য ১৫ লিরা যা বাংলাদেশী মুদ্রামান ৭৫০টাকা এবং আর-সেভেন সুপার (বড়) ইয়াবার মূল্য ২৭লিরা যা বাংলাদেশী মুদ্রামান ১,৩৫০টাকা দরে আসক্তদের মাঝে দেদারছে বিক্রি করছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রবাসী অভিযোগ করেন।

এ ব্যাপারে লেবানন আ’লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জাকির মুঠোফোনে জানান, দালালরা অতিরিক্ত টাকা নিয়ে সাধারণ মানুষদের এদেশে এনে একদিকে যেমন আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে অন্যদিকে ইয়াবা নামক বিষ দিয়ে যুব সমাজকে ধ্বংস করছে। অনতিবিলম্বে বাংলাদেশ সরকার এবং দূতাবাস এ ব্যাপারে জরুরী পদক্ষেপ নিয়ে ইয়াবার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের রুখতে হবে। পাশাপাশি তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।

এ ব্যাপারে লেবানন বিএনপির সভাপতি মফিজুল ইসলাম বাবু বলেন, ইয়াবা ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে এইসব অভিযোগ আমরাও শুনেছি। এ বিষয়ে স্থানীয় দূতাবাস, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের প্রবাসীরা এখনই এগিয়ে না আসলে তা আরও ভয়াবহরূপ নিবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে লেবাননে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাইমস’কে বলেন, ইয়াবা হল একটি মারাত্মক নেশা জাতীয় দ্রব্য। এটা আনন্দ কিংবা শখ করেও যদি কেউ এক দুইবার সেবন করে পরবর্তীতে তার পক্ষে সেটা বর্জন করা কিছুতেই সম্ভব হয়ে উঠে না। বাংলাদেশ থেকে যারা ইয়াবাগুলো এদেশে আনছে তারা একদিকে যেমন প্রবাসীদের কষ্টার্জিত টাকা লোপাট করছে অন্যদিকে তাদেরকে মরণের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিচ্ছে। কেননা, দীর্ঘমেয়াদে ইয়াবা সেবনের ফলে একটা সময় তারা শারীরিক ও মানুষিকভাবে অক্ষম হয়ে যাবে। বরং তখন উল্টো তাদেরকে আবার চিকিৎসা দিতে হবে।

তিনি আরো বলেন, আরেকটা বিষয় হল, লেবাননের সরকার কিন্তু এখনো ইয়াবা নামক মাদকটির সাথে পরিচিত হয়নি। যখন তারা জানতে পারবে বাংলাদেশি প্রবাসীরা এসব ইয়াবা স্বদেশ থেকে এদেশে এনে বিক্রি কিংবা সেবন করছে, তখন আমাদের বাংলাদেশের যে একটা ভাবমূর্তি আছে তা ক্ষুন্ন হয়ে যাবে। পাশাপাশি এদেশে আমাদের একমাত্র বাজার যেটা খোলা আছে প্রতিমাসে ১হাজার করে বছরে প্রায় ২২হাজার শ্রমিক লেবাননে আসে সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। এতে করে বাংলাদেশ সরকার প্রচুর রেমিটেন্স আয় থেকে বঞ্চিত হবে।

রাষ্ট্রদূত বলেন, ভয়ংকর এই ইয়াবা রোধে বাংলাদেশ সরকার, দূতাবাস এবং কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ সকলেই একযোগে কাজ করার আহ্বান করেন। তিনি ববলেন, এটা যদি এখনই আমরা বন্ধ না করতে পারি তবে লেবাননে অবস্থানরত প্রবাসীদের জন্য বিরাট সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

March 2018
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031  
আরও পড়ুন