লেবানন দূতাবাসে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৮:১৯ পূর্বাহ্ণ , ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
লেবানন থেকে জহির রায়হান : লেবাননে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিনব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে পালিত হলো মহান ‘ভাষা শহীদ দিবস’ ও ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’।
বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) স্থানীয় সময় সকাল ৭টায় দূতাবাসের ছাদে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা অর্ধনমিতকরণের মাধ্যমে প্রথম অধিবেশনের কার্যক্রম শুরু হয়। রাষ্ট্রদূত পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থেকে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন। পতাকা অর্ধনমিত করেন লেবানন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার।
রাষ্ট্রদূত পুষ্পস্তবক অর্পণের পর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধি দল ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনারের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পরে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, বিএনপি, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনসহ প্রবাসী বাংলাদেশীরা পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপণ করেন।
এরপর প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও পবিত্র কোরআন থেকে তিলাওয়াতের মাধ্যমে বিকাল ৫টায় দ্বিতীয় অধিবেশন আরম্ভ হয়। পবিত্র কোরআন তিলাওয়াত করেন দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন। তিলাওয়াত শেষে মহান ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন শেষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পাঠানো বাণী পাঠ করেন।
প্রথমে রাষ্ট্রপতির বানী পাঠ করেন দূতাবাসের প্রথম সচিব (কনস্যুলার) সায়েম আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর বানী পাঠ করেন দূতাবাসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ আবুল হোসেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বানী পাঠ করেন দূতাবাসের সহকারী কনস্যুলার কর্মকর্তা তানিয়া সুলতানা ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বানী পাঠ করেন দূতাবাসের সহকারী কনস্যুলার আরমান প্রধান।
দূতাবাসের প্রথম সচিব (কনস্যুলার) সায়েম আহমেদ এর পরিচালনায় এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিযুক্ত বাংলাদেশ নৌবাহিনীর প্রতিনিধি দল।
বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ লেবানন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বাবুল মুন্সী, উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলা মিয়া, লেবানন আওয়ামীলীগের আজীবন সদস্য আবুল বাসার প্রধান, সহ-সভাপতি রুবেল আহমেদ, মশিউর রহমান টিটু, মোহাম্মদ আলী, সুফিয়া আক্তার (বেবি), সাধারণ সম্পাদক তপন ভৌমিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আলমগীর ইসলাম, সাংগঠনিক সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জাকির, সহ মহিলা সম্পাদিকা বৃষ্টি রানী, শ্রমিকলীগ সভাপতি রানা ভুইয়া, আওয়ামীলীগ হাজমিয়ে শাখা কমিটির সভাপতি রুহুল আমিন, কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ ও বাংলাদেশী প্রবাসীরা।
উক্ত আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, আওয়ামীলীগ লেবানন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি মোঃ রুবেল আহমেদ, মশিউর রহমান টিটু, লেবানন আওয়ামীলীগের আজীবন সদস্য আবুল বাসার প্রধান এবং সমাপনী বক্তব্য রাখেন রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার।
রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকার বলেন, একুশের পথ বেয়েই আমরা অর্জন করেছিলাম আমাদের স্বাধীনতা। কেননা একুশ আমাদেরকে সাহস জোগিয়েছিল স্বৈরাচারীর বিরুদ্ধে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে। মাতৃভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে এ ধরণের ঘটনা পৃথিবীর ইতিহাসে একান্তই বিরল। আমরা সেই বিরল ইতিহাসের অংশীদার। মাতৃভাষা একটি জাতির অস্তিত্বের প্রতীক। এটি একটি জাতির মেধা ও মনন বিকাশের অন্যতম হাতিয়ার। মাতৃভাষা যে ভালোভাবে জানেনা তারপক্ষে প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করা একান্তাই দুরূহ ব্যাপার।
ফাল্গুন মাসের বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, এই ফাল্গুনই আমাদের শিখিয়েছিল অত্যাচারীর কঠিন শৃঙ্খল ভেঙ্গে কিভাবে দাবি আদায় করে নিতে হয়। প্রতি বছর অমর একুশে আমাদের মনে দোলা দিয়ে যায়, দেশপ্রেমের আবেগে উদ্বেলিত হই আমরা। এই দেশপ্রেমের যে ফুলকোধারা আমাদের মধ্যে জাগ্রত হয়, সে ফুলকোধারায় আপনারা উদ্বেলিত হোন এবং উদ্বেলিত হয়ে দেশপ্রেমে নিজেকে নিয়োজিত করুন।
তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতার এই ৪৬ বছরে আমরা অনেককিছু অর্জন করেছি। দারিদ্র বিমোচন, নারী শিক্ষা, নারী উন্নয়ন ক্ষেত্র, স্যানিটেশনের ক্ষেত্রে আমাদের যে অবদান সেগুলো বিশ্ব আমাদেরকে রোল মডেল হিসেবে বিবেচনা করছে। কিন্তু আমাদেরকে সামনে আরো অনেক পথ পাড়ি দেতে হবে।
শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে তিনি বলেন, চব্বিশ শতাংশ থেকে তিয়াত্তর শতাংশ পর্যন্ত শিক্ষার মান বৃদ্ধি পেলেও ত্রিশ শতাংশ লোক যা চল্লিশ মিলিয়নের বেশি লোক এখনও নিরক্ষর। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। সরকারের পাশাপাশি এখানে আপনার আমার সবারই এ ব্যপারে ভূমিকা নেওয়া উচিত। নিরক্ষর মুক্ত দেশ কিংবা সমাজ গঠনে প্রবাসী বাংলাদেশীসহ সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান করেন তিনি।
দীর্ঘ ৪০মিনিটের বক্তব্যে রাষ্ট্রদূত জিরো টলারেন্সের মাধ্যমে লেবাননে অসাধু দালালচক্র ও প্রতারকদেরকে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন, রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ছবি তুলে সেই ছবি অপব্যবহার করে কিংবা নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ প্রবাসীদের সঙ্গে প্রতারণা বা শোষণ করলে জিরো টলারেন্সের মাধ্যমে তা দমন করা বলে হুশিয়ারী দেন। সেই সাথে লেবাননে সমাজ বিরোধী কার্যকলাপের সাথে জড়িত ব্যক্তিদের প্রতি সোচ্চার হতে কমিউনিটি সদস্যদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান করেন তিনি।
দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে বার্ষিক ক্রিয়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদেরকে দূতাবাসে এসে রাষ্ট্রদূত এর সাথে কথা বলতে প্রবাসীদেরকে ম্যাসেজ দেন তিনি। সেইসাথে দেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রেখে প্রবাসে কাজ করতে সকলের প্রতি বিনীত অনুরোধ করেন তিনি।
রাষ্ট্রদূত এর বক্তব্য শেষে উপস্থিত দর্শকশ্রোতা এক জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। উক্ত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রদূত একটি দেশাত্মবোধক কবিতা আবৃতি করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গান পরিবেশন করেন স্বাধীন বাংলা শিল্পীগোষ্ঠী। সবশেষে নৈশভোজের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটে।
আপনার মন্তব্য লিখুন