লেবানন বিএনপিকে চাঙ্গা করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লেবানন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মফিজুল ইসলাম (বাবু)
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:৫০ অপরাহ্ণ , ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
লেবানন থেকে জহির রায়হান : লেবাননে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির লেবানন কেন্দ্রীয় কমিটি ও অঙ্গ সহযোগী সংগঠনসহ শাখা কমিটিগুলো গোছাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন লেবানন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি মো: মফিজুল ইসলাম (বাবু)।
বিগত ৯ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় এবং একে অপরের প্রতি কিছুটা সমন্বয়হীনতার কারণে বিএনপির অনেক নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছিল। ঠিক এসময় তিনি লেবাননে বিএনপির দল গোছাতে এবং দলকে চাঙ্গা করতে লেবাননের আনাচে-কানাচে প্রতিনিয়ত উঠান বৈঠক এবং বিভিন্ন সভা, সেমিনার, গণসংযোগ অব্যাহত রেখে চলেছেন।
গত ৩০/১০/২০১৬ইং তারিখে লেবানন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ নির্বাচনে সভাপতি পদে জয়লাভ করার পর থেকেই লেবাননে বিএনপিকে কিভাবে চাঙ্গা করা যায় এবং বিএনপি সমর্থিত বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে কিভাবে এক সারিতে দাঁড় করানো যায় এ নিয়ে তিনি নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। লেবানন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যগণদের সৎ পরামর্শ ও দিকনির্দেশনার পাশাপাশি সাধারণ সম্পাদক মোঃ জাকির হোসেন জাকিরসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে নিয়ে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বলতে গেলে এ উদ্যোগে তিনি অনেকটাই সফল হয়েছেন।
কেননা, সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর মাত্র এক বছর কয়েক মাসেই লেবাননে বিএনপি সক্রিয় হতে শুরু করেছে যা লক্ষণীয়। লেবাননের যে শহরগুলোতে একসময় বিএনপির কোন নামগন্ধও ছিল না, এখন সেই শহরগুলোতে শাখা কমিটিও রয়েছে। সভাপতি মো: মফিজুল ইসলাম (বাবু) নির্বাচিত হওয়ার পর যদিও ১টি শাখা কমিটির অনুমোদন দিয়েছেন। লেবাননে বিএনপিকে চাঙ্গা করতে পূর্বের অনুমোদিত শাখা কমিটিগুলোকে বিভিন্ন সভা, সেমিনারের আয়োজন করে দলকে চাঙ্গা করতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদেরকে জোর তাগিদ দেন। বর্তমানে লেবাননে বিএনপির মোট ১৯টি শাখা কমিটি রয়েছে।
শুধু তাই নয়, সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তিনি বাংলাদেশে গিয়ে বিরোধী দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সাথে সাক্ষাত করেন এবং দলের যুগ্ম মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাক্ষরিত লেবানন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন নিয়ে আসেন। এতে করে, লেবানন বিএনপির নেতাকর্মীদের মনে নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে এবং ঝিমিয়ে থাকা দুর্বল নেতাকর্মীরা চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। আর এই সবকিছু হয়েছে শুধুমাত্র সভাপতি মফিজুল ইসলাম বাবু’র জন্যই। এছাড়াও তিনি দলের জন্য একজন নিবেদিত প্রাণ।
জানা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার কাইমপুর ইউনিয়ন বিলগড়া গ্রামের শিক্ষিত এবং সম্ভ্রান্ত এক মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া মোঃ মফিজুল ইসলাম বাবু বাবা ফজলোর রহমান মা ফাতেমা বেগম দম্পতির প্রথম সন্তান। তার এক ভাই মোঃ মাহবুব ইসলাম মামুন বর্তমানে ইকনোমিক ব্রাহ্মণবাড়িয়া মোক্তাদি মহিলা কলেজের প্রফেসর ও বোন মোছাঃ মাহমুদা আক্তার এমএ পাশ করে বিয়ে হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আইডিয়াল স্কুল এন্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মোঃ সোপানুল ইসলাম সোপান স্যারের সাথে।
মফিজুল ইসলাম বাবু এবং তার স্ত্রী শামীমা ইসলাম দম্পত্তির দুই সন্তান রয়েছে। বড় মেয়ে জুমানা ইসলাম সপ্তম শ্রেণীতে আর ছোট ছেলে সোহানুল ইসলাম প্রথম শ্রেণীতে পড়ছে।
মফিজুল ইসলাম বাবু’র বাবা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ কর্মকর্তা। বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীতে পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি অবসরপ্রাপ্ত। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন তিনি। ২৫শে মার্চের কালোরাতে তিনি ঢাকা রাজারবাগ পুলিশ লাইনসে কর্মরত ছিলেন। পুলিশ বাহিনী থেকে ভারতে পাঠানো হয় ট্রেনিং করার জন্য। তার হাতে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছেন।
বাবা পুলিশ বাহিনীতে চাকুরীর সুবাদে মফিজুল ইসলাম বাবু’র লেখাপড়া চট্টগ্রামেই সম্পন্ন হয়। তিনি ১৯৯১ সালে চট্টগ্রামের দামপাড়া পুলিশ লাইনস স্কুল থেকে এসএসসি ও চট্টগ্রাম পাহাড়তলি কলেজ থেকে ১৯৯৩ সালে এইচএসসি পাশ করেন এবং একই কলেজ থেকে বিবিএ তে দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যায়নরত অবস্হায় ১৯৯৫ সালে লেবাননে পাড়ি জমান।
মফিজুল ইসলাম বাবু পারিবারিকভাবে রাজনৈতিক পরিমন্ডলে বেড়ে না উঠলেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শ বুকে লালন করেছেন। সেই আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছোটবেলা থেকেই দলকে প্রচন্ড ভালবাসতেন। আর এই ভালবাসার ফসল স্বরূপ তিনি আজ লেবানন বিএনপি কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন।
মফিজুল ইসলাম বাবু শুধু একজন রাজনীতিবিদই নন, সামাজিক সংগঠনেও আছে তার পদচারণা। ২০০৯ সালে তিনি লেবাননে বাংলাদেশ বৈরুত অ্যাসোসিয়েশন’র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হয়ে দীর্ঘ ৫ বছর সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করেছেন। লেবাননে প্রবাসী কল্যাণ সমিতির একবারের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, একবারের আহ্বায়ক ও একবার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।
শুধু তাই নয়,এছাড়াও সুপ্রতিষ্ঠিত একজন ব্যবসায়ী হিসেবে লেবাননে রয়েছে তার ব্যাপক খ্যাতি। লেবাননে বাংলাদেশি প্রথম ব্যবসায়ী হিসেবেও মফিজুল ইসলাম বাবু’র পরিচিত রয়েছে ব্যাপক। জুমু এন্ড বিলাল খলিল কোম্পানিতে ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন সুদীর্ঘ ১২টি বছর। বর্তমানে তিনি বাবু ইষ্ট কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং বাংলাদেশে জুমানা ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত রয়েছেন। লেবাননে বাংলাদেশি পণ্য প্রথম সরবরাহকারী হিসেবেও তার জুরী নেই। তিনি লেবাননে ২ বছর বাংলাদেশি প্রাণ কোম্পানির এজেন্টও ছিলেন।
সভাপতি মোঃ মফিজুল ইসলাম (বাবু) তার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা এবং লেবানন নিয়ে স্বপ্নের কথা বলেছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া টাইমস ডট কম এর সাথে। রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মফিজুল ইসলাম (বাবু) বলেন, লেবানন একটি ছোট্ট দেশ। কিন্তু এই দেশে বর্তমান বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় এক লক্ষ ষাট হাজার। দলের নেতাকর্মী এবং দলের বাহিরে থাকা সাধারণ প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যাদি সমাধাননের লক্ষে তিনি কাজ করতে চান এবং লেবাননে কোন প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবেনা বলে উল্লেখ করেন। এছাড়া লেবাননে বিএনপির দলকে চাঙ্গা করতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ হাতে নিয়েছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।
প্রতিহিংসার রাজনীতি থাকবেনা বিষয়টাকে আপনি কিভাবে দেখেন এমন প্রশ্নের জবাবে সদালাপী মফিজুল ইসলাম (বাবু) বলেন, রাজনীতিবিদদের সুস্থ মানসিকতা এবং সদিচ্ছাই পারে প্রতিহিংসার রাজনীতি বন্ধ করতে।
আগামীর জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে আপনার কি ধারণা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে শুধু লেবানন নয়; সারাদেশের মানুষ একটা পরিবর্তনের আশায় রয়েছেন। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষে লেবাননে বিএনপির দলকে চাঙ্গা করতে তৃনমূলকে সংগঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত আছে এবং কিছুটা করতে সক্ষমও হয়েছি।
লেবাননে বর্তমান বিএনপির অবস্থা সম্পর্কে তিনি বলেন, লেবাননে বর্তমানে বিএনপি যতেষ্ট চাঙ্গা অবস্থায় রয়েছে। এ ধারা অব্যাহত রাখতে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি।
পরিশেষে, লেবানন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি, শাখা কমিটি, দলের নেতাকর্মী, সামাজিক সংগঠন, মান্যবর রাষ্ট্রদূত এবং সাংবাদিকসহ সকল শ্রেণীর মানুষকে পাশে থাকার জন্য আন্তরিক অভিবাদন জানান। আগামীর দিনগুলোতেও যাতে প্রত্যেকের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকে এজন্য সকলের আন্তরিক ভালবাসা ও সহযোগীতা চেয়েছেন তিনি।
আপনার মন্তব্য লিখুন