২১শে মার্চ, ২০২৩ ইং | ৭ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

EN

কফি বিক্রেতা শিশু রিপন এখন ছাত্র

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১১:২২ অপরাহ্ণ , ৩ জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

বয়সের গন্ডি দশে নাম তার রিপন । ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার চাতলপার গ্রামের আনিস মিয়ার ছেলে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে রিপন সবার বড়। পড়াশুনার প্রবল ইচ্ছা তাঁর। প্রথম শ্রেণী শেষ করে দ্বিতীয় শ্রেণী আর পড়া হয়নি তার।
তাঁর পিতা আনিস মিয়া দার দেনার চাপ সহ্য করতে না পেরে গ্রাম ছেড়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শহরে আসেন পরিবার নিয়ে। তাঁদের টায় হয় শহরের বর্ডার বাজার এলাকার এক বস্তিতে। তাঁর বাবা আনিস মিয়া রিক্সা ভাড়া নিয়ে চালিয়ে সংসার চালায়। লেখা পড়া করার কোন সুযোগ ছিলনা তাঁর। তাঁর কিক্সা চালক বাবা দার দেনার ভারে ছেলেকে লেখা পড়া তো দুরের কথা তিন বেলা খাবারের যোগান দিতেই হিমশিম খেতে হয়েছে। তার উপর রিপনের বাবা আনিস মিয়া হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পরলে বন্ধ হয়ে যায় পরিবারের আহার। ক্ষুদার জ্বালা সয়তে না পেরে স্থানিয় এক কফি বিক্রেতার সহযোগিতায় নেসকেপের কেটলি নিয়ে শহরে কফি বিক্রি করা শুরু করে। গেল তিন মাস শহরের বিভিন্ন সরকারি বেসকারী অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মার্কেটের, বাস স্ট্যান্ড সহ রাতায় রাতয় কফি বিক্রি করে সে। দিনশেষে মোটা অংকের টাকাটা চলে যেত মালিক পক্ষের নিকট। অল্প কিছু টাকা দেওয়া হত তাকে। সেই টাকা দিয়েই চালিয়েছে তাঁর পরিবারকে। যে ছেলেটি ক্ষুদার জ্বালায় কেঁদেছিল সে ছেলেটিই তাঁর মা, বাবা, ছোট ছোট বোনদেন অন্ন্য যোগিয়েছে।

সাম্প্রতি জাগো ফাউন্ডেশনের অঙ্গ সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশের একজন স্বেচ্ছাসেক তারেক আজিজের ফেসবুকে “স্মার্ট কফি বালক” ক্যাপশনে পোষ্ট দিলে তা চোখে পরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ মিজানুর রহমানের।
তিনি তারেক আজিজের সহযোগিতায় রিপনকে খুজে বের করে তাঁর খুজ খবর নেন।
শিশু রিপনের ছোটু জীবনের এমন করুণ পরিনতীর কথা শুণে ও তাঁর লেখা পড়ার আগ্রহ দেখে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন কে তাঁকে স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করার নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।
তারপর শহরের ৪টি স্কুল কফি বালককে ভর্তি করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। অবশেষে ২ জানুয়ারি রিপনকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কলেজ পাড়ার “ব্রাহ্মণবাড়িয়া ল্যাবরেটরী স্কুল” এ ভর্তি করা হয়েছে। এই স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ কফি বালককে পেয়ে আনন্দে উদ্ধেলিত হয়। কফি বিক্রেতা রিপনের অভিভাবক এর জায়গায় স্বাক্ষর করেছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইকবাল হোসাইন।
স্কুল কর্তৃপক্ষ পুলিশ প্রশাসনের কাছে ইচ্ছে প্রকাশ করেছে তারা স্কুলের হোষ্টেলে রেখে কফি বালককে পড়াতে চাই।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বলেন, মানবিক দিক বিবেচনা করেই আমরা শিশু রিপনের পাশে দাঁড়িয়েছি। মানবিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে খুব সহজে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। সমাজে রিপনের মতো আরও অনেক শিশু আছে। এসব শিশুদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

তারেক আজিজ জানান, রাস্তায় বেশ কয়েকদিন রিপনকে কফি বিক্রি করতে দেখেছি। পরে তার সঙ্গে কথা বলে পরিবার সম্পর্কে জেনেছি। এখন পড়ালোখা করার বয়স রিপনের, অথচ সংসারের হাল ধরেছে শিশুটি। তাই তাঁকে নিয়ে আমার ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়। পরে পুলিশ সুপারের কাছে নিয়ে যাওয়ার পর তিনি রিপনের পড়ালেখার দায়িত্ব নিয়েছেন। একইসঙ্গে পড়ালেখার ফাঁকে কফি বিক্রির জন্য সব সরঞ্জাম কিনে দেবেন বলেও জানিয়েছেন।

উলেক্ষ্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় পুলিশিংয়ের বাইরে মানবিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখে একের পর এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। সরকারি শিশু পরিবারের নিবাসী ‘অনাথ’ হাবিবা আক্তারের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করে তার রাজকীয় বিয়ে দিয়ে সারাদেশে ও নিজ বাহিনীতে ব্যাপক আলোচিত হন তিনি।
এছাড়া জেলায় বিভিন্ন সামাজিক সাংকৃতিক কমকান্ডা করে জেলা বাসীর কাছে পুলিশকে নতুন করে পরিচয় করেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

January 2018
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
293031  
আরও পড়ুন