হায়রে বাঙালি….হুজুগে বাঙালী! (বিবেক তুই আমড়া কাঠের ঢেঁকি)!
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৩:৩০ অপরাহ্ণ , ২২ ডিসেম্বর ২০১৭, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে
লেবানন থেকে জহির রায়হান : কথায় আছে- ‘থাকতে কেউ কাউকে চিনে না, আর মরিলে তার বিরহে বাঁচে না’। কত রমকের ঢং যে মানুষ করতে পারে! বেঁচে থাকতে তাঁর দুর্নাম, বদনাম, লাঞ্চনা, বঞ্চনা কম করেনি কেউ। দলের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ এমনকি এই সমাজের বিবেকবান (সাংবাদিক) মানুষ পর্যন্ত তাঁকে অপদস্থ করতে এতটুকুও দ্বিধাবোধ করেনি।
আজ তিঁনি নেই!
অথচ, বেঁচে থাকতে যারা তাঁকে নিয়ে এত গালমন্দ, সমালোচনার ঝড় তুলেছিলেন, মরে যাওয়ার পর এখন তারাই আবার তাঁকে নিয়ে হায়-হুতাশ, ফুল-চন্দন দেন, বড্ড ভাল মানুষ ছিলেন বলে আক্ষেপ করেন।
হুজুগে বাঙালি আমরা….
বলছিলাম সদ্য প্রয়াত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ১- (নাছিরনগর) মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী এড. সায়েদুল হক’র কথা। তিঁনি যে একজন সত্যিকারের সৎ, নির্ভীক, ন্যায়পরায়ণ ও গণমানুষের নেতা ছিলেন সেটা বলার আর অবকাশ রাখে না। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে শুরু করে বিভিন্ন মিডিয়ায় এখনও পর্যন্ত চলছে শুধু তাঁরই গুণকীর্তন। একজন ভাল মানুষ মরে যায় ঠিকই কিন্তু তাঁর কীর্তিগুলো তাঁকে বাঁচিয়ে রাখে অনন্তকাল। এটাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।
গত ১৬ ডিসেম্বর (শনিবার) সকালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিঁনি মারা যান। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিঁনি একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া -১ (নাসিরনগর) তাঁর নির্বাচনী এলাকা থেকে তিঁনি পাঁচবার এমপি হয়েছেন ও একবার মন্ত্রী। একবার পুরো চট্টগ্রাম বিভাগেই একজন মাত্র নৌকায় বিজয় হয়েছিলেন, এবং সেটি এই মানুষটার। অতি সাধারণ জীবন-যাপন ছিল তাঁর।
তাইতো তিঁনি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েও পৈতৃক সূত্রে পাওয়া দুটি টিনের চালের ঘর ছাড়া আর কিছুই করতে পারেননি। গায়ের পরিহিত একটি শাল ১৪টি সেলাই দিয়ে ২০ বছর পার করেছেন, দেড় যুগ ধরে একটি পাঞ্জাবী পড়েই কাটিয়েছেন। কত সাধারণ ছিল তাঁর জীবন-যাপন! অর্থ, বিত্ত কোনকিছুর প্রতি তাঁর লোভ ছিলনা। ছিল শুধু অসহায় মানুষদের প্রতি অকৃতিম ভালবাসা। তাঁর সারাটা জীবনই উৎসর্গ করে গেছেন মানব সেবায়।
গেল বছর নাসিরনগরের সাম্প্রদায়িক হামলা দুঃখজনক এবং এটা যে তাঁকে ফাঁসাতে ঘটানো হয়েছিল সেটা বলার আর অপেক্ষা রাখে না। যাঁরা এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় জড়িত ছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর আবার তাঁদের মুখ থেকেই মন্ত্রী ছায়েদুল হক একজন ভাল মানুষ ছিলেন এই কথাটা শুনতে একটুও ভাল লাগে না। তারা হুজুগে বাঙালি….!
মানুষের বিবেক আজ টাকার কাছে বিক্রি হয়, ক্ষমতার কাছে নুইয়ে পড়ে, অসহায় ও দুর্বল মানুষের প্রতি অন্যায়, অবিচার সেতো বিবেকবান মানুষেরই কাজ! আমাদের সমাজের বিবেকহীন মানুষদের জন্য সদ্য প্রয়াত মন্ত্রী এড. সায়েদুল হক’র আদর্শ উদাহরণ হিসেবে থেকে যাবে অনন্তকাল।
প্রয়াত মন্ত্রী এড. সায়েদুল হক’র রূহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করছি। মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমিন তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব করুন, আমিন।
লেখক : জহির রায়হান।
সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মী।
বৈরুত, লেবানন।
আপনার মন্তব্য লিখুন