পশ্চিমবঙ্গে জনপ্রিয় বাংলাদেশের কমিকস
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:০৩ পূর্বাহ্ণ , ১৪ নভেম্বর ২০১৭, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে
বাংলাদেশ থেকে গরিব ও অসহায় মানুষদের ভয় আর লোভ দেখিয়ে পাচার করা হচ্ছে। কাজে না লাগলে তাদের ছুড়ে ফেলা হচ্ছে সাগরে অথবা জিম্মি করে নেওয়া হচ্ছে মুক্তিপণ। পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মাঠে নামল আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থা এসবিআইবি ও এর বাংলাদেশি এজেন্ট সি কে জাকি। রহস্যের সমাধানে দেশ থেকে বিদেশে চলে তাঁর মিশন।
এটি দেশি কমিক হিরো সি কে জাকিকে নিয়ে লেখা একটি গল্প। তবে সি কে জাকির মতো বাংলাদেশের কমিকসও এখন দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে যাচ্ছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের পাঠকদের কাছে বাংলাদেশের কমিকস বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সেখানকার কমিকস লেখক ও শিল্পীরাও অনুপ্রাণিত হচ্ছেন এ দেশের মৌলিক কমিকস দেখে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে মৌলিক বাংলা কমিকস তৈরি ও প্রকাশ করছে দুটি প্রতিষ্ঠান। এগুলো হলো ঢাকা কমিকস ও পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড। এই কমিকসগুলোর মূল চরিত্রগুলো দেশীয়। এর মধ্যে ঢাকা কমিকস শুধুই কমিকস নিয়ে কাজ করে থাকে। আর মাইটি পাঞ্চ স্টুডিওস নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান মূলত ইংরেজিতে কমিকস তৈরি করে। তবে এ বছর বাংলা কমিকসেরও দুটি বই এনেছে তারা।
তবে শুধু ছোট ছোট গল্পের কমিকস নয়, বড় গল্পের গ্রাফিক নভেল নিয়েও কাজ হচ্ছে বাংলাদেশে। কমিকস বইয়ে একাধিক গল্প থাকতে পারে, তবে গ্রাফিক নভেলে থাকে একটি গল্পের স্রোত। আর সেই বড় গল্প একাধিক বইয়েও গড়াতে পারে।
বর্তমানে ঢাকা কমিকসের প্রকাশিত বাংলা কমিকসের বইয়ের সংখ্যা ৪৩। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড প্রকাশ করেছে ৪৯টি বই। আর মাইটি পাঞ্চ স্টুডিওস বাংলা কমিকসের দুটি বই বাজারে এনেছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বুক ফার্ম নামের একটি প্রতিষ্ঠান ঢাকা কমিকসের বইয়ের পরিবেশনা করছে। বুক ফার্মের কর্ণধার শান্তনু ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, পশ্চিমবঙ্গে গত তিন বছরে ৩০টি কমিকস বইও বের হয়নি। সেদিক থেকে বাংলাদেশে আধুনিক ও নতুন, বিশেষ করে মৌলিক গল্পের কমিকস তৈরি হচ্ছে।
শান্তনু ঘোষ জানান, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুক ও পরিচিতজনদের কাছ থেকে তিনি বাংলাদেশের কমিকসের কথা শুনে যোগাযোগ করেন। দেড় বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে বাংলাদেশের কমিকস বিক্রি করছে তাঁর প্রতিষ্ঠান। বছরে গড়ে হাজার কপির বেশি কমিকস বিক্রি হচ্ছে।
গত কলকাতা বইমেলায় নির্ধারিত সময়ের আগেই ঢাকা কমিকসের সব বই বিক্রি হয়ে গিয়েছিল জানিয়ে শান্তনু বলেন, ‘এখানে বাংলাদেশের কমিকসের ভালো পাঠকশ্রেণি তৈরি হয়েছে। অনেকে তালিকা দেয় কমিকস এনে দিতে। আমাদের লেখক ও শিল্পীরা বাংলাদেশি কমিকস থেকে অনুপ্রাণিত হচ্ছে। আমরাও নতুন কমিকস তৈরির কাজ করছি এখন। তবে ঝকঝকে রঙিন কমিকস তৈরিতে এগিয়ে আছে ঢাকা। তারা আন্তর্জাতিক মানের কাজ করছে।’
বাংলাদেশের মৌলিক কমিকস দেখে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কমিকস লেখক ও শিল্পীরা।
পশ্চিমবঙ্গে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘দুর্জয়’ সিরিজের কমিকস। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, দুই দেশেই সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে এই কমিক সিরিজের বই। এটি বের করছে ঢাকা কমিকস। একই প্রতিষ্ঠানের বের করা কমিক চরিত্র ‘জিতু আর টিইইই’ ছোটদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয়। এ ছাড়া আছে স্পাই সিরিজ ‘সি কে জাকি’। পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেডের প্রকাশ করা কমিকসের মধ্যে ‘বেসিক আলী’ ও ‘মারুফ’ সিরিজ বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেয়েছে। অন্যদিকে মাইটি পাঞ্চ স্টুডিওসের ‘সাবাশ’ সিরিজের কমিকসও সমাদৃত হয়েছে।
বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো কার্টুন পত্রিকা ‘উন্মাদ’-এর সম্পাদক কার্টুনিস্ট আহসান হাবীব বলেন, ‘যে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা কমিকস দেখে-পড়ে আমরা বড় হয়েছি, সেখানেই এখন কমিকস চর্চা প্রায় বন্ধের পথে। সেই পশ্চিমবঙ্গের বাজারে এখন আমাদের কমিকস বিক্রি হচ্ছে। তাই দেখে ওখানকার তরুণ কমিকস–শিল্পীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন, এটা একটা বিশাল প্রাপ্তি।’
পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড এখন কলকাতায় নতুন পরিবেশক খুঁজছে। প্রতিষ্ঠানটির সৃজনশীল বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার নিলয় নন্দী বলেন, ‘কলকাতার বাজার সম্ভাবনাময়। আগের চেয়ে আরও বড় পরিসরে আমরা সেখানে কাজ করতে চাই। আশা করি, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই আমরা নতুন পরিবেশক পেয়ে যাব।’
ঢাকা কমিকসের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক মেহেদি হক বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ আমাদের কমিকস দিয়ে তাদের বাজার চাঙা করছে—এটি খুব ভালো দিক। তবে সেখানে বই বিতরণের কিছু জটিলতা আছে। বিশেষ করে করের উচ্চ হারের কারণে সেখানে কমিকস বেশি দামে বিক্রি করতে হয়।’ ভবিষ্যতে দেশের বাজার অনুযায়ী অ্যানিমেশন চিত্র তৈরির ইচ্ছে আছে বলে জানান তিনি।
গত আশির দশকে সাদা-কালো কমিকস আঁকতেন আহসান হাবীব। সেই সময়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, কার্টুন ও কমিকসের কাজের সুফল বহুদিন আগে থেকেই আসতে শুরু করেছে। আহসান হাবীব বলেন, ‘তবে ঢাকা কমিকস বা পাঞ্জেরী যা করছে, সেটা হচ্ছে কালার কমিকসের একটা উত্থান। আর ঢাকা কমিকস কিছু মৌলিক ম্যাচিউরড কমিকস চরিত্র তৈরি করেছে, যা এরই মধ্যে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।’
আপনার মন্তব্য লিখুন