৬ই ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ২১শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

লেবাননে একাংশের আ’লীগ নেতা আলী আকবর মোল্লার সংবাদ সম্মেলন

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ণ , ২৭ আগস্ট ২০১৭, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগে

লেবানন থেকে জহির রায়হান : লেবাননে আওয়ামীলীগ একাংশের সভাপতি আলী আকবর মোল্লা সংবাদ সম্মেলন করেছে। গত মঙ্গলবার (২২ আগষ্ট) লেবাননের মোকাল্লেসে এ সংবাদ সম্মেলন করা হয়।
গত ২১শে আগষ্ট (সোমবার) বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ দূতাবাসের পাশের একটি কফিশপ থেকে লেবাননের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হন আওয়ামীলীগ একাংশের সভাপতি আলী আকবর মোল্লা। তারপর তিনি তাঁর মালিকের (কফিল) সহায়তায় মুক্তি পেয়েই এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
উক্ত সংবাদ সম্মেলনে আলী আকবর মোল্লা তাঁর লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ দূতাবাস ও দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত আব্দুল মোতালেব সরকারের চক্রান্তের শিকার বলে অভিযোগ করেন। তাছাড়া রাষ্ট্রদূত মোতালেব সরকারের নির্দেশে দূতাবাসের কর্মকর্তা খালেদ সরদার তাঁকে স্থানীয় পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করান বলেও তিঁনি অভিযোগ করেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে আলী আকবর মোল্লা বলেন, আমি কয়েকজন নেতাকর্মীর সাথে প্রতিদিনের ন্যায় কফিশপে আড্ডা দিচ্ছিলাম। সেসময় সাদা পোশাকে কয়েকজন লোক পুলিশ পরিচয়ে আমার নাম জানতে চাইলো। আমি আলী আকবর মোল্লা বলার সাথে সাথেই আমাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। গ্রেফতারের সময় কারো সাথে কোনপ্রকার কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়নি। এমনকি আমার মালিকের (কফিল) সাথেও কথা বলার সুযোগ পাইনি। আমার দুই হাত পিছনে নিয়ে হাতকরা লাগায় এবং চোখে কালো কাপড় বেঁধে থানাহাজতে নিয়ে যাওয়া হয়। কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে ধমক দিয়ে মুখ বন্ধ রাখতে বলা হয়।
তিঁনি আরো বলেন, আমাকে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চে নিয়ে গিয়ে সেখানে তিন ঘন্টা যাবত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রথম প্রশ্নই ছিল রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার কি সমস্যা ? দূতাবাসের নিচে কফিশপে বসে সাধারণ প্রবাসীদের কাছ থেকে ফরম পূরণ বাবদ প্রতারণার মাধ্যমে টাকা কেন নেই? এছাড়া রাষ্ট্রদূত এর বিরুদ্ধে কেন আমি দুর্নীতির অভিযোগ করেছি সে প্রশ্নও আমাকে করা হয়।
পুলিশের প্রশ্নের জবাবে কি উত্তর দিলেন জানতে চাইলে চাইলে আলী আকবর মোল্লা বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস বিল্ডিং এর চার তলায় দূতাবাস আর তিন তলায় আমার মালিকের (কফিল) অফিস। তাই কাজের ফাঁকে অবসর সময়ে এই কফিশপে আড্ডা দেই। দূতাবাসে আসা অক্ষরজ্ঞানহীন সাধারণ প্রবাসীদের সাহায্যার্থেই আমি এই ফরম পূরণ করে দিয়ে থাকি এবং  আমার হাতের লেখা প্রায় তিন হাজারেরও বেশি ফরম রয়েছে। যেখানে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ মোবাইল নাম্বার দেওয়া আছে। চাইলে সেসব নাম্বারে ফোন দিয়ে জানতে পারেন, আমি তাঁদের কাছ থেকে কোন টাকা-পয়সা নিয়েছি কিনা। যদি এমন কোন প্রমান মেলে তাহলে লেবাননের আইন অনুযায়ী যেকোনো শাস্তি আমি মাথা পেতে নেবো।
তিঁনি আরো বলেন, রাষ্ট্রদূতের সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন বিরোধ নেই। আমি একজন সচেতন বাংলাদেশী প্রবাসী হিসেবে সাধারণ প্রবাসীদের ভালমন্দ দেখি এবং সেটা দেখার দায়িত্ব অবশ্যই আমার কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। রাষ্ট্রদূত অবৈধ প্রবাসীদেরকে দেশে পাঠানোর নাম করে বিমান ভাড়া বাবদ জনপ্রতি ৩৫০ (মার্কিন ডলার) নেন। অথচ লেবাননের বৈরুত টু ঢাকা বিমান ভাড়া কখনোই ২০০/২২০ অথবা ২৩০ এর বেশি হয় না। অবশিষ্ট বাকি টাকাগুলো প্রবাসীদেরকে কেন ফেরত দেওয়া হয়না জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত বলেন, অবশিষ্ট টাকাগুলো লেবাননের জেনারেল সিকিউরিটিতে উৎকোচ হিসেবে দিতে হয়। আমার এসব কথা শুনে পুলিশও রাষ্ট্রদূতের প্রতি বিব্রতবোধ করেছেন। আমার এমন কথার প্রেক্ষিতে পুলিশ বলেন, লেবাননের সরকার এমন ঘৃণিত কাজ কখনোই করতে পারে না।
মোল্লা আরো বলেন, গত বছর ট্রাভেল পাস দিয়ে দেশে যাওয়ার পথে  ঈদের আগে বিমানবন্দরে কিছু বাংলাদেশী গ্রেফতার হয়। তারা প্রত্যেকেই তাদের জরিমানা এবং টিকেটের টাকা পরিশোধ করেছিল। তবুও কেন তাদেরকে গ্রেফতার করা হল? লেবানন সরকার কর্তৃক সাধারণ ক্ষমা এবং ছাড়পত্র পাবার পর পুলিশ কি আবারও গ্রেফতার করতে পারে?  এমন প্রশ্নের উত্তরে পুলিশ বলেন, লেবানন সরকার সবকিছু খতিয়ে দেখেই ছাড়পত্র দেয় সুতরাং পুনরায় গ্রেফতারের প্রশ্নই আসে না।
মোল্লা বলেন পুলিশ তাঁকে আরো জানান, সরকারের কোন দপ্তরে কেউ যদি এক টাকাও জমা দেয় তাহলে সেই দপ্তর থেকে তাকে এই একটি টাকার রশিদ দিতে বাধ্য। তখন পুনরায় আমি পুলিশকে আবার প্রশ্ন করলাম, তাহলে যারা পেনাল্টি ফি দিয়ে দেশে গিয়েছে তাদের জরিমানার রশিদ কোথায়? পুলিশ ও তখন আমার কথা শুনে হতবাক হয়ে নীরব হয়ে রইলেন। তারপর আমার কথাগুলো যাচাই-বাছাই করে এবং আমার মালিকের (কফিল) সহযোগীতায় আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা খালেদ সরকারের প্রত্যাহার কেন চাচ্ছেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মোল্লা বলেন, রাষ্ট্রদূতের নির্দেশে খালেদ আমাকে পুলিশ দিয়ে গ্রেফতার করিয়েছে। পুলিশের সাথে খালেদের কথোপকথনের সময় পুলিশের মুখে বারবার খালেদ শব্দটি উচ্চারণ হওয়ায় আমার আর বুঝতে বাকি নেই যে খালেদই এই কাজটি করিয়েছে। সেসময় পুলিশ একাধিকবার খালেদকে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন মোল্লা অপরাধী নয় সে নির্দোষ তাই  চাইলেই তাকে দেশে পাঠানো যাবেনা। তাছাড়া সে বৈধ এবং তার মালিক (কফিল) রয়েছে। এসব কথায় কি প্রমান হয় না যে, খালেদ তাঁর ব্যক্তিগত স্বার্থে আমাকে গ্রেফতার করিয়েছে। এছাড়া তাদের কুকর্মের কথা ফাঁস করে দেওয়ায় আমাকে প্রতিহত করতেই গ্রেফতার করানো হয়েছে।
তাই আমি দুর্নীতিবাজ খালেদ এবং রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাহার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবী করছি।
আকবর মোল্লার সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনিত সকল অভিযোগ মিথ্যা, বানোয়াট এবং ভিত্তিহীন। কারণ আমি দেশ থেকে ফেরার আগেই আকবর মোল্লা গ্রেফতার হয়েছিল। তিঁনি আরো বলেন, আকবর মোল্লা একজন অবৈধ প্রবাসী। তাঁর কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। অতএব সে গ্রেফতার হতেই পারে। দূতাবাসের অপর কর্মকর্তা খালেদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিঁনি বলেন, আমি তদন্ত করে বিষয়টি খতিয়ে দেখবো সে কোন অপরাধ করছে কিংবা কোন অপরাধের সাথে জড়িত আছে কিনা। প্রকৃতপক্ষে সে অপরাধী হয়ে থাকলে অবশ্যই তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দূতাবাস সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং সকল সাধারণ প্রবাসীদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া লেবাননে রাজনীতির নামে যে হিংসা, বিদ্বেষ রয়েছে তা পরিহার করে সকল প্রবাসী বাংলাদেশীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিদেশে বাংলাদেশের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে রাষ্ট্রদূত সকল প্রবাসীদের প্রতি অনুরোধ জানান।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

August 2017
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন