৩রা ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

প্রতিনিয়তই বাড়ছে ওজন বাঁচতে চান ২৯৫ কেজির মাখন মিয়া

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৯:২৪ অপরাহ্ণ , ২৯ মার্চ ২০১৭, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 7 years আগে

‘যহন প্রেসারটা একটু লো অইয়া যায় তখন খালি খিদা লাগে বেশি। সামনে যা পাই তাই খাইতাম ইচ্ছা করে। খাওয়ন শেষ অয় কিন্তু আমার পেডে খিদা থাহে। অত খাওয়ন আমি পামু কই। পেডে খিদা থাকলে আবার শরীর খারাপ লাগে। ’

কথাগুলো বলতে বলতে কেঁদে উঠলেন, মাখন মিয়া। সামনে থাকা অনেকের চোখেই তখন পানি। মাখন মিয়া চুপ রইলেন অনেকক্ষন। চোখ মুছে বাঁচার আকুতি জানালেন। নিজের চিকিৎসা ও খাবার খরচ জুগানোর জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করলেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌর এলাকার দক্ষিণ মৌড়াইলের বাসিন্দা মাখন মিয়া। বয়স ৩৮ বছর। ওজন এখন প্রায় ২৯৫ কেজি। প্রতিনিয়তই তাঁর ওজন বাড়ছে। বেশ কয়েক বছর ধরে চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। এখন হাঁটা চলাও দায় হয়ে পড়েছে তাঁর জন্য।

ছোট বেলাতে এমন ছিলেন না মাখন মিয়া। ২০-২২ বছর বয়স থেকে তাঁর ওজন বাড়তে থাকে। ওজন কমানের জন্য মাটি কাটার মতো পরিশ্রমের কাজে লাগানো হয়। কিন্তু তাতেও ফল আসেনি। এমন তথ্যই দিলেন মাখন মিয়ার বাবা মিলন মিয়া।

গত সোমবার রাতে মাখন মিয়ার বাড়িতে বসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত লেখা তিনি সযত্নে রেখেছেন। ওই লেখায় উঠে এসেছে উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে মিশরের এক নারীর ১০৮ কেজি ওজন কমানোর কথা। ভারতের মুম্বাইয়ে ওই নারীর চিকিৎসা হয়। মাখন মিয়াও চান তাঁর ওজন কমাতে। কিন্তু দেশের বাইরে গিয়ে চিকিৎসা করানোর ব্যয় বহন তাঁর কিংবা পরিবারের পক্ষে সম্ভব না।

মাখন মিয়া জানান, ২০০১ সাল থেকে তিনি মোটা হতে শুরু করেন। তখন ওজন কমানোর জন্য তিনি ভারী কাজ বেছে নেন ও প্রতিনিয়ত ব্যয়াম করতেন। কিন্তু এতে কাজ হচ্ছিল না। ২০১০ সালের দিকে ওজন ১৫০ কেজি হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন। ঢাকায় গিয়ে বেশ কয়েকবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করিয়ে ওষুধ খেয়েছেন। কিন্তু এখনো ওজন বেড়েই চলছে।

রুটি খেলে পেটে সমস্যা দেখা দেয়। যে কারণে তিন বেলা ভাত খেতে হয় মাখন মিয়াকে। তাও আবার নরম করে। এছাড়া অন্যান্য স্বাভাবিক খাবারও খান সাধারণ মানুষের চেয়ে একটু বেশি। ভারী শরীরের কারণে এখন তিনি কোনো কাজই করতে পারেন না। এমনকি প্রাকৃতিক কাজ সারা, বিছানায় শুয়ে থাকাটাও তাঁর জন্য অনেক কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে। আত্মীয়-স্বজনরা মাখন মিয়ার খাবার খরচ জুগানোসহ সংসারের অন্যান্য খরচ বহন করছেন।

মাখন মিয়া বিয়ে করেন ২০০৩ সালে। তাঁর বড় ছেলে মো. রাব্বি নিয়াজ মুহম্মদ উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র ও মেয়ে নাভা সাহেরা গফুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রী। চার ভাই, তিন বোনের সংসারে তিনিই সবার বড়।

মাখন মিয়ার স্ত্রী লুৎফা বেগম জানান, শরীর অনুযায়ী খুব বেশি খাবার খান না তাঁর স্বামী। খাবারের চাহিদাও খুব বেশি নেই। কিন্তু খাবার কম খেলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দিনকে দিন তিনি মোটা হয়েই চলছেন। এখন তিনি স্বামীকে বাঁচাতে চিকিৎসার জন্য সকলের সহযোগিতা চান।

কথা হয়, দক্ষিণ মৌড়াইলের বাসিন্দা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মহিউদ্দিন খান খোকন, শহর আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মো. জামাল খান ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. ফারুক মিয়া, আইনজীবী মো. রুবেল খানের সঙ্গে। তাঁরা জানান, সাম্প্রতিক সে মাখন মিয়া অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেছেন। এখন তাঁর বেঁচে থাকাটা দায় হয়ে পড়েছে। এলাকার সবাই মিলে তাঁর চিকিৎসা করানোর একটা উদ্যোগ নিয়েছেন। তবে কোনো সুহৃদয়বান বিত্তশালী ব্যক্তি যদি তাঁর চিকিৎসার দায়িত্ব নেন তাহলে বিষয়টা সহজ হয়ে যাবে।

এদিকে মাখন মিয়ার চিকিৎসা সাহাযার্থে অর্থ সংগ্রহের জন্য গত সোমবার তাঁর স্ত্রী লুৎফা বেগমের নামে অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড ব্রাহ্মণবাড়িয়া শাখায় নতুন একাউন্ড নম্বর খোলা হয়েছে। যার নং ০২০০০০৯৬৪২৮২০। মাখন মিয়ার মোবাইল ফোন নম্বর ০১৭৬০৩১১৯৬১।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. আবু সাঈদ বলেন, ২৯৫ কেজি ওজন একজন মানুষের জন্য অস্বাভাবিক। গ্রোথ হরমোন অতিরিক্ত কাজ করলে এমন হতে পারে। নিউরোলজিস্ট ও হরমোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তাঁর ওজন বৃদ্ধির বিষয়ে জরুরি চিকিৎসা করানো প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধির বিষয়টি রোধ করা গেলে পরবর্তীতে হয়তো ওজন কমানোর বিষয়টি চিন্তা করা যেতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

March 2017
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন